পারিবারিক প্রয়োজনে দ্বিতীয় বিয়ে করে সেই স্ত্রীর দ্বারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন ময়মনসিংহের নান্দাইলের এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ী স্বামীকে ফাঁদে ফেলে কোটি টাকার সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছেন ঐ নারী। আগের পক্ষের সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের স্থানে বিভিন্ন সনদে ঐ ব্যবসায়ীর নাম ব্যবহার করা করা হয়েছে। তালাক হয়ে যাবার পর যৌতুক মামলা করা হয়েছে। এসব নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে ঐ নারী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। আবার ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলাসহ পাল্টা নানা অভিযোগ করছেন ঐ নারী।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে গিয়ে জানাযায়, ময়মনসিংহে নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও গ্রামের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আলী আমজাদ খান(জীবন) এলাকায় বিশাল ফিসারী করাসহ ঢাকায় ব্যবসা বাণিজ্য করেন। ঢাকায় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে তিনি ঢাকাতেই থাকতেন। বাড়িতে বৃদ্ধা মা থাকতেন। বৃদ্ধা মায়ের নির্দেশে প্রথম স্ত্রী অনুমোদন নিয়ে ২০০৭ সালে তিনি সংসারের প্রয়োজনে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের জামিয়া রোড এলাকার ইউসুফ আতিকের মেয়ে অকাল বিধাব শারমিন জাহান (সুমনা)কে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রী নিয়ে একটি সংসার ঢাকায় এবং দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে একটি সংসার গ্রামের বাড়িতে থেকে চলতে থাকে। দ্বিতীয় স্ত্রী তার প্রথম স্বামীর পক্ষের সন্তান শায়রান খান জয়কে সঙ্গে নিয়ে আসেন। আলী আমজাদ খানও সেটা স্বাভাবিকভাবে নিয়ে সেই স্ত্রীর সন্তানকে আপন সন্তান হিসেবে লালন পালন করতে থাকেন। সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করার সময় স্ত্রী কৌশলে আগের স্বামীর সন্তানের পিতার নামের স্থলে আনোয়ার হোসেন বাবুল না লিখে দ্বিতীয় স্বামী আলী আমজাদ খানের নাম লেখান। এভাবে নান্দাইলের ২৪ নং আল আজাহার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি, চন্ডিপাশা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও এসএসসি এবং কিশোরগঞ্জের গরু দয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় সন্তান শায়রান খান জয়।
এদিকে বিয়ের কয়েক বছর পর থেকেই সংসার জীবনে সন্দেহজনকভাবে চলতে থাকেন স্ত্রী সুমনা। তিনি স্বামীর কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের জমি লিখে নেন। স্ত্রীর একঘুয়েমির কারণে তাদের সংসারে টানাপোড়েন চলতে থাকে। এক পর্যায়ে গত আগস্ট মাসের ১৬ তারিখ তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর তালাকের কাগজ হাতে পেয়ে স্ত্রী শারমিন জাহান বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে আলী আমজাদ খান জীবনের বিরুদ্ধে যৌতুকদাবী করে নারী নির্যাতন করার অভিযোগ এনে মামলা করেন। সেখানে ১৬ আগস্ট ঘটনা দেখিয়ে তাকে ১২ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবীতে শারীরিক নির্যাতন করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়।
অপরদিকে শায়রান খান জয়ের পিতৃ পরিচয়ে আলী আমজাদ খান জীবনের নাম ব্যবহার করা হয়েছে জানতে পেরে তিনি মামলা করেন। সেটির তদন্ত ভার পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই)। এব্যাপারে আলী আমজাদ খানের নাম ব্যবহার করার বিষয়টি মিথ্যা উল্লেখ করে শারমিন জাহান ছেলের জেএসসি, এসএসসি পরীক্ষার সনদ প্রমানপত্র হিসেবে দাখিল করেন। সেখানে দেখা যায় পিতার নামের স্থলে আনোয়ার হোসেন বাবুল লেখা আছে। কিন্তু এনিয়ে সরেজমিনে গেলে, আল আজাহার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবলী দাস জানান, স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে শায়রানের পিতার নামের স্থলে আলী আমজাদ খানের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন খাতাসহ অন্যান্য কাগজপত্র উপস্থাপন করেন। চন্ডিপাশা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের কাগজপত্রেও দেখা যায়, সেখানে ভর্তি থেকে শুরু কওে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার সকল কাগজপত্রে পিতার নামের স্থলে আলী আমজদ খান ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক সরবরাহ করা সনদগুলোতে পিতার নাম বদলে কি করে আনোয়ার হোসেন বাবুল লেখা কাগজ শারমিন জাহান প্রদর্শন করলেন তা নিয়ে সকলে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
আলী আমজাদ খান জীবন বলেন, শারমিন জাহানকে বিয়ে করে আমি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। জীবন উষ্ঠাগত করে তুলেছে। পরবর্তীতে তালাক দিতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু সে এখন আমার বিরুদ্ধে চক্রান্তে নেমেছে। এর সাথে তার ভাই অনিক, রনি আহমেদসহ স্থানীয় আরোও কিছু লোকনিয়ে একটি চক্র গড়ে তুলেছে। আমার সম্পদ আত্মসাৎ করতে তারা মাঠে নেমেছে। তিনি বলেন, ঢাকা থাকার সুযোগ সে গ্রামের বাড়ী থেকে আসবাবপত্রসহ লাখ লাখ টাকার সম্পদ নিয়ে গেছে। ছোট স্ত্রী হিসেবে আমি তাকে প্রায় কোটি টাকার সম্পদ লিখে দিয়েছিলাম সেগুলোও সে বিক্রি করে নিয়ে যাচ্ছে। আমাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। তারা একটি অবৈধ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শিক্ষাবোর্ডের কাগজপত্রও জালিয়াতী করে নাম বদল করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি এসব বিষয়ে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ন্যায় বিচার দাবী করেন।
শারমিন জাহান মোবাইল ফোনে আলী আমজাদ খানের করা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আলী আমজাদ খানই বরং তার জীবনটাকে ধংস করে দিয়েছেন। তিনি কোন প্রতারণা বা জালিয়াতী করেননি বরং আলী আমজাদ খান কর্তৃক তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে দাবী করেন। তিনিও ন্যায় বিচার দাবী করেন।
Leave a Reply