যশোরে পুলিশ সদস্যকে মারপিটের অভিযোগে পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহমুদ হাসান বিপুকে আটকের পর ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। সোমবার রাত পৌনে ৯টার দিকে আটকের পর মঙ্গলবার বিকালে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়।
তবে আটকের পর সোমবার মধ্যরাতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ৬ নেতাকর্মীর বাড়িতে ভাংচুর চালানো হয়েছে। প্রতিবাদে দিনভর সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভে উত্তাপ ছিল রাজপথ। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের আসন কেশবপুরেও অবরোধ ও বিক্ষোভ হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেছেন, পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে এ তাণ্ডব চালিয়েছে।
মঙ্গলবার রাত পৌনে ৭টার দিকে যশোরের পুলিশ সুপার আশরাফ হোসেন বলেন, পুলিশ সদস্য মারপিটের ঘটনায় মামলা হয়েছে। প্রকৃত অপরাধী চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে দুইজন গ্রেফতার হয়েছে। এর বেশি মন্তব্য করেননি এসপি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, সোমবার রাত ৮টার দিকে পুলিশ লাইনসে কর্মরত কনস্টেবল ইমরান সাদা পোশাকে পুরাতন কসবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এক নারীর সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন। এ সময় ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাকর্মী সেখানে গিয়ে নারীর সঙ্গে গল্প করতে দেখে তার ওপর চড়াও হন। নিজের পরিচয়পত্র দেখান পুলিশ কনস্টেবল ইমরান। পরিচয় পাওয়ার পরও তারা চড়াও হয়।
একপর্যায়ে ইমরানকে শহীদ মিনার থেকে তুলে নিয়ে মারপিট করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ইমরানকে উদ্ধার করে। এ সময় অভিযুক্তদের পুলিশ হেফাজতে নেয়।
যশোর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান জানান, শহীদ মিনার এলাকায় সাদা পোশাকে থাকা দুইজন পুলিশ সদস্য নারী নিয়ে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় বসেছিলেন। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন তাদের মারপিট করে। হট্টগোল দেখে পাশের শেখ আবু নাসের ক্লাব থেকে মাহমুদ হাসান বিপু এগিয়ে যান। মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। তিনি মারপিটে জড়িত নন। পুলিশ তাকে রাত পৌনে ৯টার দিকে তুলে নিয়ে গেছে।
এদিকে বিপুকে আটক নিয়ে দিনভর বিক্ষোভের পর মঙ্গলবার বিকালে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে। তাকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় হয়ে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেছেন, এ ঘটনার পর সোমবার মধ্যরাতে পুলিশ যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি আব্দুল খালেক, তার ছেলে পৌর কাউন্সিলর হাজী সুমন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য পৌর কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা, জেলা যুবলীগের সদস্য মনজুর আলম, এমএম কলেজ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান এবং যুবলীগ কর্মী সোহাগের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। এ সময় এই বাড়িগুলোতে ভাংচুর তাণ্ডব চালানো হয় বলেও নেতাকর্মীদের অভিযোগ।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি আব্দুল খালেক জানান, তার বাড়িসহ ৫/৬ জন নেতার বাড়িতে পুলিশ হামলা ভাংচুর করেছে।
এদিকে এসব ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল থেকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সমানে বিক্ষোভ করেছেন নেতাকর্মীরা। ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত যশোর-চুকনগর মহাসড়কের কেশবপুরে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অভয়নগরে যশোর-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে কেশবপুর শহরে যশোর সাতক্ষীরা সড়ক ৪ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে কেশবপুরের আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা। অবরোধ চলাকালে যশোর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সোহেদ আহমেদ খানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ অবরোধ তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশের সাথে তীব্র বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
অবরোধ চলাকালে যশোর সাতক্ষীরা সড়কে শত শত যানবাহন আটকে পড়ে। বাসযাত্রীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে।
সাতক্ষীরা থেকে বাসে আসা যাত্রী আবুল হালিম বলেন, তার মা অসুস্থ। তাকে দেখতে যশোর যাচ্ছেন তিনি। সাড়ে ৭টা থেকে তিনি বাসে বসে আছেন। চরম ভোগান্তির শিকার তিনি।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপি কেশবপুর থেকে উপ নির্বাচনে নির্বাচিত। যে কারণে সকাল ৭টা থেকে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে দলের নেতাকর্মীরা কেশবপুর শহরের শহীদ দৌলাত বিশ্বাস চত্বরে অবস্থান নেয়।দলের উপজেলা শাখার সভাপতি এসএম রুহুল আমীন ও সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে তারা সড়ক অবরোধ করেন।
গোলাম মোস্তফা বলেন, যশোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহমুদ হাসান বিপুসহ ৫ নেতাকর্মীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়ার প্রতিবাদে তারা সড়কে অবস্থান নেন।
Leave a Reply