1. iamparves@gmail.com : admin :
  2. hdtariful@gmail.com : Tariful Romun : Tariful Romun
  3. shohagkhan2806@gmail.com : Najmul Hasan : Najmul Hasan
  4. janathatv19@gmail.com : Shohag Khan : Shohag Khan
  5. ranaria666666@gmail.com : Sohel Rana : Sohel Rana
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:৩৮ অপরাহ্ন

যৌন চাহিদার অবদমন, ধর্ষণ এবং মৃত্যুদণ্ড

অনলাইন ডেক্স
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২০

ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন থেকে বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করে অধ্যাদেশ জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি। সংসদ অধিবেশন শুরু হলে এটি আইনে পরিণত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ধর্ষণকারীরা পশুর চেয়ে অধম তাই এই ফাঁসির বিধান। মৃত্যুদণ্ড নিয়ে অনেকের আপত্তি আছে কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে বেশিরভাগ মানুষ একমত যে অসভ্যদের জন্য অসভ্য আইনই দরকার। বর্বরতাকে দমন করতে হয় বর্বরতা দিয়ে। চারদিকে ধর্ষণবিরোধী শোর উঠায় সরকারের এই পদক্ষেপ ধর্ষণ প্রতিরোধে তার কঠোর মনোভাবকে ইঙ্গিত করে।

প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এমন কঠিন আইন করেও কি ধর্ষণ থামানো যাবে? গত কয়েক সপ্তাহ ধরে শোরগোলের মধ্যেও ধর্ষণ কিন্তু থেমে ছিল না। বেশ কয়েকটি ধর্ষণের খবর এসেছে। যে কোনো সমস্যার সমাধানে শুধু বিচার নয়, কঠিন সাজা দেওয়াও নয়- সমস্যাটি যাতে সমাজে উৎপত্তি না হয় তার পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী। সোজা বাংলায় রোগের চিকিত্সার চেয়ে প্রতিরোধ বেশী ভাল। রোগটি কেন হচ্ছে সেটা দেখে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সবার আগে- যাতে এটি মহামারী রূপে না ছড়ায়।

ধর্ষণ এখন মহামারী রূপে দেখা দিয়েছে তাই আমরা ধর্ষণের কঠিন সাজার পক্ষে, ধর্ষিতার জন্য ন্যায় বিচারের পক্ষে। কিন্তু ধর্ষণ সংস্কৃতি কেন দিন দিন জোরদার হচ্ছে সেটা নিয়ে আমরা কেউ মাথা ঘামাচ্ছি না। ধর্ষকদের সমাজে রাজনৈতিক আধিপত্যকেও দায়ী করছি অনেকে। একে রাজনৈতিক রূপও দিতে চাচ্ছি। কিন্তু ’৭১ সালে বাঙালি নারীদের পাকিস্তানী সেনা কর্তৃক ধর্ষণের ঘটনা এবং স্বাধীন বাংলাদেশে দু’চারটি ঘটনা ছাড়া কোনো ধর্ষণের পেছনে রাজনীতি নেই। কোনো সরকারকেই ধর্ষকদের শেল্টার দিতে দেখিনি আমরা।

ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি। কিন্তু সমাজবিজ্ঞানীরা এই ব্যাধির সাজা নিয়েই আছেন। প্রতিকার নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। রাজনীতিবিদ, সমাজপতিরাও এটা নিয়ে কথা বলেন না। মাঝখানে অনন্ত জলিলের মতো মাথা মোটা লোকেরা ধর্ষণের জন্য পোষাককে দায়ী করে লেজে গোবরে অবস্থা করেন, ধর্ষণের জন্য নারীদের পোষাককেই দায়ী করেন। পোশাক যে ধর্ষণের প্রধান কারণ নয় তার প্রমাণ তো দুই বছরের শিশু আর বোরকাপরা নারীকে ধর্ষণের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। তবে ধর্ষণের জন্য পোশাক দায়ী না হোক, যৌনতায় পোশাকের ভূমিকা নেই তা বলা যাবে না। সমাজ বিশ্লেষকরা এই বিষয়গুলো ভালোভাবে বিশ্লেষণ করেন না বলেই অনন্ত জলিলরা এটা নিয়ে মত প্রকাশ করতে আসেন। তিনি এবং তার ফলোয়াররা জানেন না- কোনটা ওপেনিয়ন আর কোনটা ইগনোরেন্স।

এনজিও গোষ্ঠী যেখানে টাকা আছে সেই ইস্যু নিয়ে মাতামাতি করে। ধর্ষকদের সাজা দিতে তারাও সরব কিন্তু ধর্ষণ কমানোর উপায় নিয়ে কেউ কথা বলে না। সবাই ধর্ষণ বিরোধী কথা বলে কিন্তু ধর্ষণের প্রধান কারণ যে যৌনক্ষুধা নিবারণ সেটা নিয়ে শব্দ করে না। যৌন সহবাস স্বাভাবিক একটি বিষয়, ধর্ষণ হচ্ছে অস্বাভাবিক। প্রাণীর খাদ্যের ক্ষুধা নিবারণের মতোই যৌন ক্ষুধা নিবারণের প্রয়োজন আছে। কিন্তু আমরা যদি বলি যৌন ক্ষুধা নিবারণের জন্য অনেক কিছুর মধ্যে দেশে আরও পতিতালয় স্থাপনের দরকার আছে তাহলে একদল ধর্মবাদী কিংবা আরেকদল নারীবাদী ক্ষেপে যাবেন।

বিকল্প তাহলে কি- জানতে চাইলে তারা কেউ সোজাসুজি সত্যটা বলতে পারেন না। ধর্মবাদীরা অবশ্য বাল্যবিবাহের দিকেই ইঙ্গিত করেন। তারা বলেন যে সাবালক হলেই ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিয়ে দাও। আরেকটু উদার হয়ে মাওলানা আজহারীর মতো মর্ডান হুজুররা বলছেন বিয়ে করে পড়াশোনা চালিয়ে যাও, যে যার বাপের বাড়িতে থাক। শিক্ষাজীবন শেষে সংসার কর। কিন্তু সামাজিক বাস্তবতা, ক্যারিয়ার যুদ্ধ- তরুণ-তরুণীদের বা তাদের অভিভাবকদের বাল্য বিয়েতে সম্মতি দিতে দেখা যায় না। আবার আর্থিক সঙ্গতি নেই বলে অনেক-নারী পুরুষের স্বাভাবিক বিয়ের বয়স পার হয়ে গেলেও বিয়ে করতে পারছে না। তারাও বিকল্প খুঁজেন।

ছেলে-মেয়ে যদি পরস্পর মেলামেশার সুযোগ পায়, জরুরী না যে এই মেলামেশায় তারা বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হবে, তাতেও অসংলগ্ন যৌন আচরণ কমে যাবে সমাজে। যে সমাজে একজন নারী-পুরুষ স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে পারে না, স্বাভাবিক চলাফেরা করতে তাদের মধ্যে অস্বাভাবিক দূরত্ব নির্ধারণ করে দেয় সমাজ – তখনই তো সমাজে অসামাজিকতা, অসভ্যতা বাড়ে। কিছু পুরুষ অপরিচিত নারীকে রাস্তায় দেখলে যেভাবে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, বখাটেরা যেমন রাস্তাঘাটে মেয়েদের বিরক্ত করে- আমার ধারণা সমাজে ছেলে-মেয়ের মেলামেশার সম্পর্ক আরো স্বাভাবিক হলে এটি হতো না। মেলামেশার মাধ্যমে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালবাসা, দুষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হত। এটিকে ব্যাবিচার হিসেবে দেখার সুযোগ নেই বরং এর সীমারেখা কতটুকু হবে, আমাদের কালচার কতটুকু পারমিট করে সেটা দেখতে হবে। তা না করে দিনে দিনে রক্ষণশীলতার দিকে এগুলে প্রতিক্রিয়াও বর্বর হবে।

আমরা সমাজকে দিন দিন এত বেশি কুপমন্ডুকতার দিকে নিয়ে যাচ্ছি যে, পার্কে বসে একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ একান্তে কথা বলবে তাতেও আমাদের আপত্তি। দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ হোটেল রুম বা বাড়ির বন্ধ দরজায় নিজেদের ইচ্ছায় কি করবে সেটা নিয়ে আমাদের পুলিশের আপত্তি। মাঝখানে তো একবার দেখলাম হোটেলের স্বামী-স্ত্রী বসবাস করতে হলেও কাবিননামা দেখাতে হবে। যে সমাজ একজন নারীকে মানুষ হিসেবে দেখে না, নারী-পুরুষের স্বাভাবিক সম্পর্ক যখন নিষিদ্ধ বিবেচিত, সমাজ-রাষ্ট্র নারী-পুরুষের স্বাভাবিক যৌন চাহিদাকে অবদমন করতে চায়, তখন ওই সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়া তো অস্বাভাবিক নয়। ধর্ষণ এরই পাশ্ব প্রতিক্রিয়া।

উন্নত দেশে এ ধরণের আচরণ হয় না। অনেকে ধর্ষণের রেকর্ডের জন্য উন্নত দেশের উদাহরণ টানেন কিন্তু এটা দেখেন না যে সেখানে আইন আছে, বিচার আছে, ধর্ষণের ঘটনা রেকর্ড হয়।, আমাদের দেশে সিকি শতাংশ ধর্ষণেরও রেকর্ড হয় না। ধর্ষণকে ধামাচাপা দেওয়া হয়, সালিশী নিষ্পত্তি করা হয় আর আদালতে উঠলে সাধারণ ডিএনএ টেস্টে যেটা প্রমাণ করা যায় সেদিকে না গিয়ে ধর্ষিতাকে ভিক্টোরিয়ান আইনে জেরার মুখে ফেলি। ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে ধর্ষিতাকে চরিত্রহীনা নন, সে পরীক্ষা দিতে হয় আগে।

অনেকে স্বাভাবিক মেলা মেশাতেও ধর্মের দোহাই দেন। কিন্তু কঠোরভাবে ধর্ম পালন করে এমন রাষ্ট্র ইরানে আমি দেখেছি নারী-পুরুষ অফিস আদালতে পাশাপাশি স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে, কথাবার্তা বলতে। রাস্তায় অবাধে চলতে। মধ্যরাতেও পাবলিক পরিবহনে নারীকে একা চলতে। বাংলাদেশে কি মাঝরাতে একজন মহিলা একা চলাফেরা করতে পারে? দিনের বেলায়ও রাস্তায় বেরুলে চিড়িয়া দেখার মতো পুরুষরা নারীকে দেখে না- এমন কোনও জায়গা আছে বাংলাদেশে? আগে আসুন সমাজের এসব অসঙ্গতিগুলোর দিকে দৃষ্টি দেই আমরা। মৃত্যুদণ্ড ঘোষণাতে তৃপ্ত হয়ে যেন বসে না থাকি। নারী-পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন না হলে, মৃত্যুদণ্ড ধর্ষণ কমাতে পারবে না।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট, ইরাক ও আফগান যুদ্ধ-সংবাদ সংগ্রহের জন্য খ্যাত।
anisalamgir@gmail.com

সূত্র : জাগোনিউজ

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:৪৯
  • ১২:৪৬
  • ৪:৪৬
  • ৬:২৭
  • ৭:৪১
  • ৭:০১