ব্যভিচার, অবিচার ও মাদক ধর্ষণের পথকে সুগম করে। যে সমাজে ব্যভিচারকে হালকা করে দেখা হয়, অবিচারই মানুষের নিয়তি হয়, যুবসমাজ হয়ে পড়ে মাদকাসক্ত, সে সমাজে ধর্ষণের মতো অপরাধ বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক বিষয়। এই জঘন্য অপরাধগুলোর বিষক্রিয়ায় সমাজ বিষাক্ত হয়ে যায়। ধর্ষণ-ব্যভিচার পৃথিবীকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়।
এ জন্য পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না, নিশ্চয়ই তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট কাজ।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩২)
উল্লিখিত আয়াতে জোর করে ধর্ষণ তো দূরের কথা, উভয়ের সম্মতিতে অবৈধভাবে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়াকেও নিষিদ্ধ করা হয়। বলা হয়েছে, ‘ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না।’ কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, এটি একটি অশ্লীল কাজ। মানুষের মধ্যে লজ্জা-শরম না থাকলে সে মনুষ্যত্ব থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। অতঃপর তার দৃষ্টিতে ভালোমন্দের পার্থক্য লোপ পায়। সে যা ইচ্ছা তা-ই করতে থাকে।
ব্যভিচারে আসক্ত ব্যক্তিরা যখন ব্যভিচারের সঙ্গী না পায়, তখন তারা হায়েনা হয়ে ওঠে। ফলে সুযোগ পেলেই ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হয়। এ কারণে ইসলাম ব্যভিচারকে কঠিনভাবে নিষিদ্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে গণসচেতনতা গড়ে তুলেছিলেন রাসুল (সা.)। তিনি যুবসমাজকে বরাবর এই জঘন্য অপরাধ থেকে দূরে থাকতে উৎসাহিত করতেন।
আবু উমামা (রা.) বলেন, এক যুবক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে ব্যভিচার করার অনুমতি দিন। এটি শুনে চারদিক থেকে লোকেরা তার দিকে তেড়ে এসে ধমক দিল এবং চুপ করতে বলল। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে কাছে ডেকে নিয়ে বলেন, বসো। যুবকটি বসলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বলেন, তুমি কি এটি তোমার মায়ের জন্য পছন্দ করো? যুবক জবাবে বলল, আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন, আল্লাহর শপথ, তা কখনো পছন্দ করি না।
তখন রাসুল (সা.) বলেন, তেমনিভাবে মানুষও তাদের মায়েদের জন্য সেটি পছন্দ করে না। তারপর রাসুল বলেন, তুমি কি তোমার মেয়ের জন্য তা পছন্দ করো? যুবক উত্তর করল, আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন, আল্লাহর শপথ, তা কখনো পছন্দ করি না। তখন রাসুল (সা.) বলেন, অনুরূপভাবে মানুষ তাদের মেয়েদের জন্য সেটি পছন্দ করে না। তারপর রাসুল বলেন, তুমি কি তোমার বোনের জন্য সেটি পছন্দ করো? যুবক উত্তর করল, আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন, আল্লাহর শপথ, তা কখনো পছন্দ করি না। তখন রাসুল বলেন, তদ্রুপ লোকেরাও তাদের বোনের জন্য তা পছন্দ করে না। (এভাবে রাসুল (সা.) তার ফুফু, ও খালা সম্পর্কেও অনুরূপ কথা বলেন আর যুবকটি একই উত্তর দিল) এরপর রাসুল (সা.) তার ওপর হাত রাখলেন এবং বলেন, ‘হে আল্লাহ! তার গুনাহ ক্ষমা করে দিন, তার মনকে পবিত্র করুন এবং তার লজ্জাস্থানের হেফাজত করুন।’ বর্ণনাকারী সাহাবি বলেন, এরপর ওই যুবককে কারো দিকে তাকাতে দেখা যেত না। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২২১১)
এই হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, যুবসমাজকে ধর্ষণ-ব্যভিচারসহ সব অপরাধ থেকে ফেরাতে তাদের মধ্যে ব্যাপক দাওয়াতি কাজ করতে হবে। হালাল-হারাম সম্পর্কে তাদের অবগত করতে হবে। তাকওয়া অবলম্বনে উৎসাহ দিতে হবে এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর মতো ভালোবাসা দিয়ে তাদের বোঝাতে হবে।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে চারিত্রিক পবিত্রতা দান করুন। ব্যভিচার, ধর্ষণসহ সব অপরাধ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন।
Leave a Reply