আলমডাঙ্গার নতিডাঙ্গা আবাসনে বসবাসকারী এক প্রসূতি সদ্যভূমিষ্ঠ সন্তান বিক্রি করেছেন বলে জানা গেছে। ব্র্যাকের স্থানীয় এক স্বাস্থ্যসেবিকার মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী গোয়ালবাড়ি গ্রামের এক দম্পতির কাছে ওই নবজাতককে বিক্রি করা হয়। স্বামী পুত্র সন্তান চায় না তাই সন্তান বিক্রি করেছে বলে প্রসূতি জানালেও ৩ বছর পূর্বে এই প্রসূতি আরেকটি সন্তান বিক্রি করেছিলেন বলে এলাকাবাসী জানায়।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার বাড়াদী ইউনিয়নের নতিডাঙ্গা আবাসনের ৪ নম্বর শেডের ৫ নম্বর কক্ষে বসবাস করেন খাইরুল ইসলামের স্ত্রী মিনারা খাতুন (৩২)। মিনারা খাতুন খাইরুল ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী। খাইরুল ইসলাম একই গ্রামে প্রথম স্ত্রীর সাথে বসবাস করেন। বুধবার ভোরে প্রসববেদনা উঠলে স্থানীয় ব্র্যাক সংস্থার সেবিকা হেনা খাতুন ও আবাসনের বাসিন্দা বারেক আলীর স্ত্রী আমেলা খাতুনের সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন মিনারা। সকাল ৮টার দিকে পুত্রসন্তান প্রসব করেন। সঙ্গে সঙ্গেই মিনারা খাতুন তার সদ্যভূমিষ্ঠ পুত্রসন্তান ব্র্যাকের সেবিকা হেনা খাতুনের হাতে তুলে দেন।
মিনারা খাতুন বলেন, অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কথা শুনে ৮ মাস আগে আমাকে রেখে আমার স্বামী চলে যায় প্রথম স্ত্রীর নিকট। এখানে (আবাসনে) আর আসে না। মাঝে মধ্যে মোবাইল ফোনে কথা হয়। কন্যাসন্তান হলেই আমার স্বামী আমাকে মেনে নেবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমার ছেলে হওয়ায় আমি সন্তান দিয়ে দিয়েছি। সন্তান এখন অসুস্থ। সুস্থ্য হলে টাকা দেবে।
নবজাতকের বাবা খাইরুল ইসলাম বলেন, আমার দুই সংসারে প্রথম স্ত্রীর ৩ ছেলে। দ্বিতীয় স্ত্রীরও এক ছেলে আছে। আমি আর ছেলে সন্তান নিতে চাই না। তবে, আমার সন্তানকে বিক্রি করা হয়েছে কি-না আমি জানি না।
আলমডাঙ্গা উপজেলা ব্র্যাক সংস্থার সেবিকা হেনা খাতুন বলেন, মোবাইল ফোনে আমাকে ডেকে নেওয়ার কারণে তাদের সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গিয়েছিলাম। ছেলে সন্তান হওয়ার পর মিনারা তার সন্তানকে অন্য কারো কাছে দিয়ে দিতে বলেন। পরে আমি পার্শ্ববর্তী গোয়ালবাড়ি গ্রামের মনোয়ার হোসেনের স্ত্রী নিঃসন্তান বুলবুলি খাতুনের কাছে ওই সন্তান দিয়েছি।
একই আবাসনে বসবাসকারী কাশেম আলী বলেন, মিনারা খাতুন বছর চারেক আগে তার প্রথম সন্তান ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে কুষ্টিয়া এলাকায় বিক্রি করে।
আবাসন পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবদার খাঁ অভিযোগ করে বলেন, কয়েক বছর আগেও ছেলেসন্তান প্রসব করেন খাইরুল ইসলামের স্ত্রী মিনারা খাতুন। সেই সন্তানও মিনারা খাতুন বিক্রি করেছিল ৪০ হাজার টাকায়। সন্তান বিক্রিটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। মিনারার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
স্থানীয় বাড়াদী ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ পারভেজ বলেন, এলাকার লোকজনের মুখে শুনেছি মিনারা খাতুন সন্তান জন্ম দেয় আর বিক্রি করে। আইন অনুযায়ী তার বিচার হওয়া দরকার।
আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন আলী বলেন, বিষয়টা আমার জানা ছিল না। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিচ্ছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply