বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় বউমেলা জমে উঠেছে। ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় পরের দিন এই বউমেলা অনুষ্ঠিত হয়। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বাজারসংলগ্ন ইছামতি নদীর শাখা গাড়ীদহ খালের তীর ঘেঁষে বসে এই মেলা। প্রায় ২০০ বছর আগে থেকে মাঘ মাসের শেষ বুধবার সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে এ পোড়াদহ মেলার আয়োজন করা হয়।
বিশাল আকৃতির মাছের জন্য বিখ্যাত এই মেলা উপলক্ষে আশপাশের ২০টি গ্রামের বাড়িতে শুরু হয় উৎসব। প্রতিটি বাড়িতে নতুন বউ-জামাই যেমন আসেন, তেমনি পুরনো আত্মীয়রাও কেউ বাদ যায় না। কিন্তু সেসব আত্মীয়দের মধ্যে শুধু পুরুষরাই পোড়াদহ মেলায় যাওয়ার সুযোগ পান। নিরাপত্তা এবং বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় ওই মেলায় নারীরা প্রবেশ করতে পারেন না।
এ অবস্থায় নারীদের নিয়ে একটি মেলার আয়োজন করা হয় ২০ বছর আগে। পোড়াদহ মেলার পার্শ্ববর্তী মহিষাবান গ্রামের ভেতরের ফাঁকা জমিতে এই মেলা আয়োজন করেন স্থানীয় মণ্ডল ও সরকারবাড়ির লোকজন। এর পর থেকেই পোড়াদহ মেলার পরের দিন এই মেলা বসছে। নারীদের জন্য আয়োজন করা মেলাটি এখন পরিচিতি লাভ করেছে ‘বউমেলা’ হিসেবে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ত্রিপল ও শামিয়ানা টাঙিয়ে পসরা নিয়ে বসেছিল দোকানিরা। মেয়েদের প্রসাধনী সামগ্রীই মেলার প্রধান উপজীব্য হলেও তার সঙ্গে স্থান পায় ছোটদের খেলার সামগ্রী আর গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ভিড় জমতে শুরু করে নারী ও শিশুদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেলার দোকানে দোকানে নারী শিশুদের ভিড়। খেলনা ও রকমারি কসমেটিক ছিল তাদের কেনাকাটার তালিকায়। মেলায় বাহারি ডিজাইনের কসমেটিক সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে দোকানে বসেন নারী দোকানিরা। তবে সীমিতসংখ্যক দোকানে পুরুষ বিক্রেতাকেও দেখা যায়।
মেলায় আসা আয়শা বেগম, রোকসানা বেগম, আলেয়া, দোলা, আকলিমাসহ কয়েকজন নারী জানান, মেলায় প্রথম দিন প্রচন্ড ভিড় থাকে। এদিন মাছ-মিষ্টি বেচা-বিক্রিতে লাখো মানুষের ঢল নামে। যাদের সিংহ ভাগই পুরুষ। এ কারণে মেলায় যাওয়া হয়ে ওঠে না। পরদিনের মেলা শুধুই নারীদের জন্য বলে নারীদের উপস্থিতিটাই মুখ্য।
তারা জানান, বউমেলায় পুরুষ মানুষ আসেন না। মেলার রীতি অনুযায়ী এদিন মেলায় পুরুষদের আসতে মানা। তাই নারীদের জন্য সুবিধা হয়। তারা মেলায় আসেন। ঘোরাঘুরি করেন। স্বজনের সঙ্গে গল্প করেন। আড্ডা দেন। সঙ্গে পছন্দের প্রিয় জিনিসগুলো কেনেন।
বউমেলায় কেনাকাটা করতে এসে স্থানীয় নারীরা জানান, মেলায় শুধু নারীরাই ক্রেতা, আবার অনেক দোকানে নারীরাই বিক্রেতা হওয়ায় নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ানো যাচ্ছে, কেনাকাটা করা যাচ্ছে।
দোকানিরা জানান, মেলায় নারীরাই যেহেতু ক্রেতা, তাই প্রসাধনী সামগ্রীই সেখানে বিক্রি হয় বেশি। মহিলাদের প্রসাধনীর পাশাপাশি শিশুদের খেলনার বিক্রিও ভালো।
মেলার আয়োজক হান্নান সরকার জানান, পোড়াদহ মেলা উপলক্ষে এখানকার বাসিন্দাদের রেওয়াজ হয়ে উঠেছে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের নিমন্ত্রণ জানিয়ে খাওয়ানো। কিন্তু সেসব স্বজনের মধ্যে যেসব নারী আসেন, তারা মেলায় যেতে পারেন না বলে বিষয়টি খুবই পীড়াদায়ক ছিল। এ কারণেই মূলত বউমেলার আয়োজন করা। এখানে যেসব পুরুষ মানুষ সঙ্গে আসছেন, তারা নিজেদের ইচ্ছাতেই মেলার ভেতরে ঢোকেন না।
Leave a Reply