মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রম শেষ পর্যন্ত মনিটরিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকে তদন্ত, বিচার প্রক্রিয়া, প্রচার-অপপ্রচার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা সব বিষয়ের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখবে কমিটি। কোনো হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংসদীয় কমিটির এ ধরনের তৎপরতা এই প্রথম। এ প্রসঙ্গে কমিটির সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান মানবজমিনকে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডটি সময়ের সবচেয়ে বেশি আলোচিত হত্যাকাণ্ড। তাই আমরা হত্যাকাণ্ডের শেষ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সব ঘটনা পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে বলা হয়েছে-সংসদীয় কমিটির প্রতিটি বৈঠকে তারা যেনো সিনহা হত্যাকাণ্ড নিয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি সংসদীয় কমিটিকে অবহিত করে। ঘটনার ওপর তীক্ষ্ণ নজরদারির অংশ হিসেবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এ ধরনের নির্মম হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দেখতে চাই।ভবিষ্যতে যেনো এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সে বিষয়ে সবাই আরো সতর্ক হবে বলে আশা করি। এদিকে, সিনহা হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংসদীয় কমিটি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন সংসদীয় কমিটির সদস্যরা। তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার সম্পন্ন হলে তা বাংলাদেশে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উত্থাপিত কার্যপত্র থেকে এই তথ্য জানা যায়। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সাবেক সেনা সদস্য কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ জানতে চান। মুহাম্মদ ফারুক খান বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা করে ফেলা এটা খুবই দুঃখজনক। সংসদীয় কমিটিকে একটি পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সংসদীয় কমিটিকে জোরালো ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নিয়েছে জানতে চান তিনি। বৈঠকে উপস্থিত সেনাবাহিনীর এ্যাডজুটেন্ট মেজর জেনারেল মো. এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, মেজর (অব) সিনহা মো. রাশেদ খানের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে একটি কমিটি করে দেন। উক্ত কমিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করছে। যৌথ কমিটির কার্যক্রম এখনো চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষ হওয়ার পর সর্বশেষ অগ্রগতি হয়তো বলা যাবে। তদন্ত সঠিকভাবে শেষ হওয়ার পর যারা অপরাধী তাদের উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনা হবে। পুলিশের পক্ষ থেকেও এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করা হয়েছে। এই তদন্ত ও বিচার সম্পন্ন হলে তা বাংলাদেশে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে তিনি কমিটিকে জানান। কমিটি সদস্য মোতাহার হোসেন বলেন, ওসি প্রদীপ এতো অপরাধ করার পরেও মিডিয়া বা কেউ প্রকাশ করেনি, তার ভয়ে কেউ বিচার চাইতেও সাহস পায়নি। গোয়েন্দা সংস্থা কেন এ ব্যাপারে আগে কোনো তথ্য দিতে পারলো না? তিনি ওসি প্রদীপের অপরাধের জন্য উপযুক্ত শাস্তি এবং মেজর (অব.) সিনহাকে গুলি করে হত্যা করার জন্য অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। প্রসঙ্গতঃ গত ৩১শে জুলাই রাত আনুমানিক ৯টা ২৫ মিনিটে টেকনাফ থানার আওতাধীন মেরিন ড্রাইভ এলাকার শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী কর্তৃক গুলিবর্ষণে বিএ-৬৯৩১ মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হন। এদিকে কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, সংসদীয় কমিটি বিস্তারিত আলোচনা করে ৫টি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে। এর মধ্যে রয়েছে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের তদন্তের সর্বশেষ অগ্রগতির ওপর বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়। অপর একটি সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে গুজব, মিথ্যা ও অপপ্রচার প্রতিহত করার জন্য প্রতি সপ্তাহে আইএসপিআর-এর মাধ্যমে প্রেস ব্রিফিং করে ঘটনার অগ্রগতি জনগণকে জানানোর সুপারিশ করা হয়। কার্যবিবরণী অনুযায়ী ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও কুমিল্লা-১ আসনের এমপি মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভুঁইয়া, গোপালগঞ্জ-১ আসনের এমপি মুহাম্মদ ফারুক খান, লালমনিরহাট-১ এর মোতাহার হোসেন, কিশোরগঞ্জ-৬ এর নাজমুল হাসান, যশোর-২ এর নাসির উদ্দিন,পটুয়াখালী-৪ এর মহিবুর রহমান ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি বেগম নাহিদ ইজাহার খান।
Leave a Reply