1. iamparves@gmail.com : admin :
  2. hdtariful@gmail.com : Tariful Romun : Tariful Romun
  3. shohagkhan2806@gmail.com : Najmul Hasan : Najmul Hasan
  4. janathatv19@gmail.com : Shohag Khan : Shohag Khan
  5. ranaria666666@gmail.com : Sohel Rana : Sohel Rana
শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩০ অপরাহ্ন

সীমান্ত হত্যা এবং…

ডা. ওয়াজেদ খান
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০

ভারত বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। দেশটির সাথে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্কের “সোনালী অধ্যায়” চলছে। গত একযুগে বাংলাদেশ ভারতকে যা দিয়েছে তা তারা মনে রাখবে আজীবন। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন মন্তব্য উচ্চারিত হচ্ছে হর-হামেশাই। তারপরও বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে প্রতিনিয়ত লাশ পড়ছে। নীরিহ-নিরস্ত্র বাংলাদেশিদেরকে পাখির মতো গুলি করে মারছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নতুন উচ্চতায় অবস্থানকারী দেশ দু’টির সীমান্ত এখন পরিণত হয়েছে ভয়ঙ্কর মরণ ফাঁদে। কাঁটাতারের বেড়া ও নির্মম হত্যাকাণ্ড রুখতে পারছে না কথিত সোনালী সম্পর্ক।গত এক দশকের মধ্যে চলতি বছর বিএসএফ সর্বাধিক সংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে। গত ১লা ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএসএফ হত্যা করেছে ৪৫ জন বাংলাদেশিকে। মানবাধিকার সংস্থার মতে, বিএসএফ’র হাতে ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ১ হাজার ১৮৫ জন বাংলাদেশি। দিল্লীর পক্ষ থেকে বার বার প্রতিশ্রুতি দিলেও থামেনি হত্যাকাণ্ড। এসব হত্যাকাণ্ডের কোন তদন্ত ও বিচার হয়নি বাংলাদেশ পক্ষের নমনীয়তার কারণেই। একমাত্র বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী হত্যার নায়ক অমিয় ঘোষের বিচার শুরু হয় ভারতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শাস্তি হয়নি কারো। বিএসএফ ২০১১ সালে ফেলানীকে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখে। এ ঘটনায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয় বাংলাদেশে। ঘটনাটি স্থান পায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। এরপর সীমান্তে আর কোন হত্যাকাণ্ড ঘটবে না এমন অঙ্গীকার করে ভারত।

বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবি ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ  প্রধানদের মাঝে এ পর্যন্ত শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ৫১ বার। প্রতিটি বৈঠকে সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি উঠে আসলেও তা বন্ধ হয়নি। এ নিয়ে বাংলাদেশ পক্ষ জোরালে দাবি উত্থাপনে ব্যর্থ হয়েছে বারবার। আর এ কারণেই বিরামহীন হত্যাকাণ্ড ঘটছে বলে দেশবাসীর ধারণা। অথচ সম্প্রতি রাজশাহী সীমান্তে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে বিএসএফ গুলি চালায়। বিজিবি পাল্টা গুলি চালালে একজন বিএসএফ সদস্য নিহত হয়। এ ঘটনায় তদন্ত ও বিচারের জোর দাবি জানায় ভারত। শুধু সীমান্তেই নয় ভারতে পনের-বিশ কিলোমিটার অভ্যন্তরেও বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করা হচ্ছে ঠান্ডা মাথায়। অথচ দু’দেশেই আইন রয়েছে কোন ব্যক্তি বেআইনীভাবে সীমান্ত অতিক্রম করলে তাকে আটক করে বিচারের মুখোমুখী করার। ভারত সীমান্ত এখন বাংলাদেশিদের জন্য অত্যন্ত অনিরাপদ। জমিতে হালচাষরত কিংবা নদীতে মাছ ধরাবস্থায় বাংলাদেশিদেরকে ধরে নিয়েও হত্যা করছে বিএসএফ। পরে তাদেরকে তকমা দেয়া হচ্ছে গরু চোরাচালানকারী হিসেবে।

সর্বশেষ, ১৬ ডিসেম্বরে মহান বিজয় দিবসে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার জাহিদুল ইসলাম নামে এক বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ। এর একদিন পর অনুষ্ঠিত  হয় দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল সংলাপ। গুরুত্বপূর্ণ এ সংলাপের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন কথা বলেন, সংবাদ সম্মেলনে। সীমান্ত হত্যা বন্ধে তিনি ভারতের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ আনেন।  তবে এ জন্য দায় চাপান বাংলাদেশি নাগরিকদের উপর। তিনি বলেন, বাংলাদেশিরা অস্ত্র ও বোমা নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। সেখানে তারা গোলাগুলি করে। বোমা ফাটিয়ে সৃষ্টি করে সন্ত্রাস। তার ভাষায় দুষ্টু ব্যবসায়ীরাও নাকি একই কায়দায় ভারতে অনুপ্রবেশ করে। আর এসব কারণেই তারা বিএসএফ’র হাতে নিহত হয়। মন্ত্রীর দেয়া এমন আজগুবি তথ্য ভারতীয় পক্ষ কখনো দেয়নি। এই পররাষ্ট্রমন্ত্রীই আগে বলেছেন-“ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক রক্তের। বাংলাদেশের বিজয় মানেই ভারতের বিজয়। ভারতের উন্নয়ন মানেই বাংলাদেশের উন্নয়ন। বাংলাদেশের উন্নয়ন মানেই ভারতের উন্নয়ন।” তার এসব মন্তব্যে জনমনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন “ভারতের সাথে সম্পর্ক রক্তের এবং এখন রাখি বন্ধন চলছে।” বাংলাদেশের মন্ত্রীদের এমন ভারত প্রীতি জাতিসত্বার জন্য কতোটা মর্যাদা হানিকর তা হয়তো তাদের বোধগম্য নয়।

ভারত আয়তনে ২২ গুণ বড় বাংলাদেশের চেয়ে। ভারতীয় সীমান্তের তিন চতুর্থাংশে রয়েছে উঁচু কাটা তারের বেড়া। বন্ধু প্রতিম দু’দেশের মধ্যে সুসম্পর্কের ক্ষেত্রে যা বড় ধরণের বাঁধা। আমেরিকান কবি রবার্ট ফ্রস্ট “মেন্ডিং ওয়াল” কবিতায় বলেছেন, “গুড ফেনসেস মেইক গুড নেইবারস”। প্রতিবেশীর সাথে ভালো সম্পর্কের জন্য প্রয়োজন ভালো প্রাচীর। এই প্রাচীর যখন ক্রমাগত উচুঁ, দীর্ঘায়িত ও ঝুঁকিপূণ হয়ে উঠে তখন চিড় ধরে পারস্পরিক সম্পর্কে। এখন যা ঘটছে ভারতের ক্ষেত্রে। ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র চীন, নেপাল, ভূটান, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ। কিন্তু কারো সাথে ভালো সম্পর্ক নেই ভারতের । চীন ও পাকিস্তানের সাথে ভারত যুদ্ধে জড়িয়েছে বার কয়েক। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলানো এবং চানক্য পররাষ্ট্র নীতির কারণেই ভারত অনেকটা এক ঘরে হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। ভারতের ‘বিগ ব্রাদার’ সুলভ আচরণ অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো মানতে নারাজ। অথচ বাংলাদেশ নীরবে সহ্য করছে সবকিছু। বাংলাদেশ ভারতকে অনেক কিছু দিয়েছে। বাংলাদেশ ভারতীয় পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার। বছরে ১০বিলিয়ন ডলার ভারতীয়রা নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে কাজের বিনিময়ে। ভারত বাংলাদেশের উপর দিয়ে পাচ্ছে অবাধ ট্রানজিট সুবিধা। সবচেয়ে বেশী পর্যটক ভারত ভ্রমণ করে বাংলাদেশ থেকে। চিকিৎসার জন্যও বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি ভারতে যান। দেশটির বড় ধরণের আয়ের উৎস বাংলাদেশ। ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোর অবাধ অনুষ্ঠান চলে বাংলাদেশে। কিন্তু বাংলাদেশের চ্যানেল ভারতে প্রদর্শন নিষিদ্ধ। ব্যবসায়-বাণিজ্য সবকিছুতেই একতরফা মুনাফা ভোগ করছে ভারত। পক্ষান্তরে ভারত বরাবরই বাংলাদেশকে বঞ্চিত করে আসছে গঙ্গা, তিস্তা, ও ব্রহ্মপুত্র সহ অন্যান্য নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে। ধর্ম নিরপেক্ষতার দোহাই দিলেও ভারত কার্যত একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। ধর্মভিত্তিক নাগরিকত্ব আইন করে ভারতীয় নাগরিকদেরকে বাংলাদেশ সীমান্তে পুশ করার চেষ্টা করছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের শরনার্থীদেরকে আশ্রয় দিয়েছে। এসব কিছুর জন্য বাংলাদেশ কৃতজ্ঞ। কিন্তু বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য একাত্তরে ভারত যুদ্ধ করেছে এমনটি ভাবার কোন কারণে নেই। ভারতের টার্গেট ছিলো তার চির শত্রু পাকিস্তানকে ভেঙ্গে দুর্বল করে দেয়া। একাত্তুরে সেই কাজটি করেছে তারা। গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের ৫০তম বর্ষপুর্তি উদযাপন করেছে ভারত । তাদের এ বিজয় উৎসব ছিলো পাকিস্তানকে পরাজিত করার। এদিন তারা ভুলেও বাংলাদেশের বিজয় দিবস ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কোন শব্দ উচ্চারণ করেনি। ভারতীয় মিডিয়াতে বাংলাদেশ সংক্রান্ত কোন সংবাদ প্রকাশিত বা প্রচারিত হয়নি।

ভারত অতীতে কখনোই বন্ধুত্বের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের বরাবর আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে আসছে ভারত। এ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শীর্ষ বৈঠকে নতুন করে উত্থাপিত হয়েছে বিষয়টি। বিজিবি প্রধানের অভিযোগ ভারতের মিজোরামে পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীদের আস্তানা রয়েছে। নিঃসন্দেহে বিজিবি প্রধানের এটি একটি সাহসী অভিযোগ। দু’দেশের সম্পর্ক যেখানে রক্তের, সেখানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীদের ভারত কিভাবে আশ্রয় দেয়? বিষয়টি নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে দেশবাসীকে। প্রশ্ন উঠেছে বন্ধুত্বের গভীরতা নিয়ে। প্রতিবেশী ভারতের সাথে আমাদের কোন শত্রুতা নেই। বাংলাদেশের মানুষ প্রভু নয়। ভারতকে দেখতে চায় বন্ধু প্রতীম প্রতিবেশী হিসেবে। নতজানু পররাষ্ট্র নীতি নয়, পারস্পরিক সম-মর্যাদায় ভিত্তিতে সহঅবস্থানে বিশ্বাসী বাংলাদেশ। ভারতকে অভ্যস্থ হতে হবে একই ধরণের আচার-আচরণে। বাংলাদেশের মন্ত্রীদেরকে সতর্ক সচেতন হতে হবে বাক্যবানে। বিরত থাকতে হবে বেফাস মন্তব্য করা থেকে। দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় সীমান্ত হত্যাকাণ্ড সমস্যার সুরাহা না হলে বিষয়টি উত্থাপন করতে হবে আন্তর্জাতিক ফোরামে। সাম্প্রতিক সময়ে বিএসএফ যাদেরকে হত্যা করেছে তাদের তালিকা করে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে হবে ভারতের নিকট। বিএসএফ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদেরকে কেন হত্যা করতে সাহস পায় না। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে বাংলাদেশকে।

-মতামত লেখকের নিজস্ব
লেখক: সম্পাদক, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ, নিউ ইয়র্ক।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:৪০
  • ১২:২৩
  • ৪:০৫
  • ৫:৪৪
  • ৭:০৩
  • ৬:৫৭