ফরাসি নাটকে অভিনয় দিয়ে কেরিয়ার শুরু কলকাতার অভিনেত্রী কিটু গিদওয়ানির। তারপর ইংরেজি নাটক হয়ে টেলিভিশন। নব্বইয়ের দশকে তিনি ছিলেন দূরদর্শনের প্রথম সারির অভিনেত্রী। কিন্তু তার পরে ছোট পর্দা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন।
সিন্ধি পরিবারের মেয়ে কিটুর প্রকৃত নাম কৌশল্যা। পরে অভিনয় শুরু করার সময় নিজের নাম ছোট করে তিনি কৌশল্যা থেকে কিটু হয়ে যান। কিটুর জন্ম মুম্বইয়ে, ১৯৬৭ সালের ২২ অক্টোবর। দেশভাগের সময় তার বাবা মা পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে আসেন। প্রথম দিকে কিছু বছর তাদের থাকতে হয়েছিল ওরলির শরণার্থী শিবিরে।
মুম্বাইয়ের ফোর্ট কনভেন্ট স্কুলের ছাত্রী কিটুর স্নাতক স্তরের পর থেকেই ফরাসি ভাষার শেখার আগ্রহ জন্মায়। সে সময়েই তিনি ফরাসি ও ইংরেজি নাটকে অভিনয় করেছিলেন।
দূরদর্শনে কিটুর প্রথম অভিনয় ১৯৮৪ সালে, ‘তৃষ্ণা’ সিরিয়ালে। এর পর ‘স্বাভিমান’, ‘জুনুন’, ‘শক্তিমান’, ‘এয়ার হোস্টেস’সহ বেশ কিছু সিরিয়ালের অন্যতম মুখ ছিলেন তিনি। ‘জুনুন’ সিরিয়ালে রাজ জুৎসির সঙ্গে সাহসী দৃশ্যে কিটুর অভিনয় সে সময় ছিল বিতর্কের কেন্দ্রে। ‘শক্তিমান’ এর গীতা বিশ্বাস এবং ‘স্বাভিমান’ এর শ্বেতলানা চরিত্র দু’টি কিটুর হাত ধরেই দর্শকদের পছন্দের শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিল। অবশ্য শক্তিমানের কয়েকটি পর্বের শুটিংয়ের পরেই ব্যস্ততার কারণে কিটু সরে দাঁড়ান এই সিরিয়াল থেকে।
সিরিয়ালে কাজ শুরুর আগেই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন কিটু। ১৯৮৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল তার প্রথম ছবি ‘হোলি’। এই ছবিতে আমির খানের সঙ্গে কিটুর চুম্বনদৃশ্য ছিল সে সময়ে বহুচর্চিত। কিটুর ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য হল ‘রুকমাবতী কি হভেলী’, ‘আর্থ’, ‘ফ্যাশন’, ‘জানে তু…ইয়া জানে না’, ‘ফির কভি’, ‘ধোবি ঘাট’, ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’, ‘ওকে জানু’ এবং ‘গোস্ট স্টোরিজ’।
১৯৯৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘ডান্স অব দ্য উইন্ড’। রাজন খোসার পরিচালনায় এই ছবিতে কিটু অভিনয় করেন ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতশিল্পী পল্লবীর ভূমিকায়। যিনি জীবনে উত্তরণের পথে তার প্রধান পথপ্রদর্শক মাকে হারান। জীবনের বিভিন্ন টানাপড়েন নিপুণভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তোলেন কিটু। এই ছবিতে কিটুর মা করুণা দেবীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ কপিলা বাৎস্যায়ন। বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত হয়েছিল ‘ডান্স অব দ্য উইন্ড’।
কেরিয়ারের শীর্ষে থাকতে থাকতেই টেলিভিশন থেকে দূরে চলে যান কিটু। নব্বইয়ের দশকের পর থেকে তাঁকে আর সে ভাবে দেখা যায়নি ছোট পর্দায়। তার কারণও সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন কিটু। তার কথায়, নব্বইয়ের দশকের পর থেকে সিরিয়ালে মেয়েদের যেভাবে দেখানো হয়েছে, সেটা ভালো লাগেনি। রান্নাঘরের কূটচাল এবং শ্বাশুড়ি-বউ ঝগড়া যে সিরিয়ালের মূল বিষয় থাকবে, তার থেকে নিজেকে সরিয়েই রাখবেন। জানিয়েছেন কিটু।
তাকে পর্দায় কম দেখতে পাওয়ার এটাই কি একমাত্র কারণ? কিটুর উত্তর, তিনি যেচে কাজ চাইতে পারেন না। ‘পি আর করা’ তার স্বভাববিরুদ্ধ। যদি পছন্দসই কাজ তার কাছে আসে, তবেই তিনি অভিনয় করবেন। স্পষ্ট উত্তর কিটুর।
ব্যক্তিগত জীবনেও কিটু একা। জানিয়েছেন, প্রেম এসেছিল তার পথ ধরেই। বয়সে দু’ বছরের ছোট ভাইয়ের বন্ধু থেকে বিজ্ঞাপনী ছবির নির্মাতা। বহু বার প্রেমে পড়েছেন তিনি। কিন্তু বিয়ের গন্তব্য অবধি আর পৌঁছানো হয়নি।
অভিনয়ের পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়েছিল কিটুর ব্লান্ট হেয়ারকাটও। এখনও তাকে দেখলে মনে হয় বয়স যেন এক জায়গায় থেমে রয়েছে। তার উপস্থিতি যেন একঝলক টাটকা বাতাসের মতো। এই রহস্যের কারণ কী?
কিটু জানিয়েছেন, তিনি ভালো থাকতে ভালবাসেন। নিয়মিত বিভিন্ন নাচের অনুশীলন তাকে ভালো থাকতে সাহায্য করে। তার মনের হাসিখুশি, ঝকঝকে ভাবটাই ধরা পড়ে উপস্থিতিতে।
সূত্র: আনন্দবাজার
Leave a Reply