সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশীর্বাদে দুদকের জাল থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিবের অতি ঘনিষ্ঠজন হিসেবে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকসহ কাউকেই তোয়াক্কা করতেন না তিনি। প্রায়ই ব্যাক ভর্তি ঘোষের টাকা নিয়ে পৌঁছে দিতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায়। রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে কাউকেই পরোয়া করতেননা ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক জসিম উদ্দিন। দুদক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো জসিম উদ্দিন কোন ভেলকিতে রয়েছেন বহলতবিয়াতে?
আওয়ামী লুটপাটের শাসনামলে শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন। শেখ হাসিনা সরকারের স্বৈরাচারী শাসন আমলে সংবাদমাধ্যমে এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে নিয়ে ফলাও করে সংবাদ প্রচারিত হলেও কারো সাধ্য ছিল না তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার। ফায়ার সার্ভিস সূত্র থেকে জানা গেছে, সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মইন উদ্দিন থাকাকালীন সময়ে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা জসীমউদ্দীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিবের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা নিতে পারেননি তিনি।
দেশের শীর্ষস্থানীয় একাধিক সংবাদমাধ্যমে দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তার শত কোটি টাকার সম্পদের বিবরণ সহ সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিবকে ম্যানেজ করে বেঁচে গিয়েছেন তিনি। জুলাইয়ের ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে দেশের সকল ক্ষেত্রে সংস্কারের আওতায় আসলেও রহস্যজনক কারণে ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তর চলছে আগের মতই। স্বৈরাচার সরকারের দোসর বেশ কিছু কর্মকর্তা সহ বহাল তবিয়তে রয়েছেন শত কোটি টাকার মালিক ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা জসীমউদ্দীন।
নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্দেশ্যে তদন্ত শুরু করলেও জসীমউদ্দীনের বিগত সরকারের সাথে রাজনৈতিক শক্তির কাছে অসহায় হয়ে পড়ে দুদক, বন্ধ হয়ে যায় তদন্ত। বিশ্বস্ত একটি শত্রু জানায় ফায়ার সার্ভিসের ডিডি জসীমউদ্দীন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের অতি ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে প্রায় রাতের বেলা তিনি যাতায়াত করতেন। ফায়ার সার্ভিসের ব্যাগ ভর্তি ঘুষের টাকা পৌঁছে দিতেন তার বাসায়। এ কারণেই আসাদুজ্জামান কামালের আশীর্বাদে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক ও মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও বেঁচে যান জসিম উদ্দিন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড শহরে দুটি ৬ তলা বাড়ি, ১০০ একরের বেশি জমি ও মার্কেটসহ বেশকিছু সম্পদের মালিকানা রয়েছে তার। যা তিনি নিজের নামে ছাড়াও স্ত্রী, ভাই ও শ্যালকের নামে গড়েছেন।
অথচ জাদুর কাঠি হাতে পাওয়া ওই কর্মকর্তার বাবা ছিলেন দিনমজুর। এই চাকরি করে শত কোটি টাকার মালিক কীভাবে হলেন তিনি? আলাদীনের আশ্চার্য প্রদীপের সন্ধান ছাড়া এতো সম্পদের মালিক হওয়া যায় না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দুদুকে চাপা পড়া সেই অভিযোগের সূত্রে জানা গেছে, জসিম উদ্দীন সীতাকুণ্ডের বাসিন্দা হলেও তার বাবার পরিচয় সন্দ্বীপ। তবে সম্পদের অভিযোগ মূলত সীতাকুণ্ডের সম্পদকে ঘিরেই। জসিম উদ্দিনের বাবা ছিল সামান্য দিনমজুর। তার শ্বশুর ছিলেন ফায়ার সার্ভিসের একজন ফায়ার ম্যান। তার বড় ভাই সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক। তার ছোট ভাই সরকারি ছোট পর্যায়ের চাকরি করে। রানা প্লাজার ঘটনার পর সরকারি কিছু নিয়ম গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানকে বেঁধে দেওয়ার পর থেকে জসিম এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মূলত অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রচুর সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
চট্টগ্রামে সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ফায়ার ফাইটিং লাইসেন্স দেওয়া ও নবায়ন এবং ফায়ার ফাইটিংয়ের সব ইকুইপমেন্ট নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে নিতে বাধ্য করানো তার অসৎ উপার্জনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন। তবে জসিম উদ্দীন নিজের নামে সম্পত্তি কম ক্রয় করেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। তিনি প্রায় সব সম্পত্তি বউ, শালা, ভাইয়ের মেয়েসহ নিকট আত্মীয় স্বজনের নামে সম্পত্তি ক্রয় করেছেন। অভিযোগে জসিম উদ্দীন একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকার মালিকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
অবৈধ সম্পদের মধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড স্টেশন কলেজ রোডে কালি মন্দিরের সামনে গড়ে ওঠা বদিউল আলম নিউ মার্কেট, সীতাকুণ্ডের মধ্যম মহাদেবপুরের (কলেজ রোড), ৬ তলা ভবন, জসিম নিজ নামে সীতাকুণ্ড মধ্যম মহাদেবপুর চৌধুরী পাড়া এলাকায় তার নির্মাণাধীন ৫ তলা ভবন।
অন্যদিকে স্ত্রী পারভীন আক্তারের নামে সীতাকুণ্ডের চৌধুরী পাড়ায় ৬ তলা ভবন, কলেজ রোডে এসপি মার্কেট, স্ত্রীর নামে ১০০০ শতাংশ জমি, অন্য জায়গায় ২ শতাংশ জমিসহ দোকান রয়েছে।
এছাড়া জসিম উদ্দীনের বড় ভাইয়ের নামে সীতাকুণ্ডে চৌধুরী পাড়ার পূর্ব পার্শ্বে খরিদকৃত প্রায় ২৪ শতাংশ জমি ও চট্টগ্রাম ইপিজেডের ভেতরে বড় ভাইয়ের ছেলের নামে একটি কারখানা রয়েছে। আর জসিম উদ্দীনের শ্যালক মো. সেলিমের নামে ৮০০ শতাংশ ও ৫০০ শতাংশ জমি এবং দুটি নোহা গাড়ি ও ২টি প্রাইভেট কারের মালিকানা রয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
Leave a Reply