এমনটা হওয়ার কথাই ছিল। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। ভাবনারও কিছু নেই। কথায় বলে, আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইর। পাপের বোঝা যখন ভারি হয় তখন নেমে আসে গজব। সে গজবে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। হাজী সেলিমপুত্র কাউন্সিলর ইরফান সেলিমের বেলায়ও এমনটা ঘটেছে। এটাই নিয়তি।
দু’দিন ধরে দেশের সর্বত্র একই আলোচনা। ইরফান সেলিম ইস্যু। নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমেদ তো উসিলা মাত্র। এ ঘটনা তরজমা করলে কি দেখা যায়? ইরফান সেলিমের গাড়ি লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফের মোটর সাইকেলকে ধাক্কা দেয়। নিজে অপরাধ করে। এর জন্য ইরফান সরি বলার কথা। তা না করে গাড়ি থেকে নেমে শুরু করলেন মারধর। নিজে তো মেরেছেন-ই সাথে বডিগার্ডও। নিজের পরিচয় দিয়েও রক্ষা পাননি ওয়াসিফ।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ রক্তাক্ত। অঝোর ধারায় কাঁদছেন। বলছেন, আমি নিজেকে রক্ষার কিছু কৌশল জানি। তাই বেঁচে গেছি। না হয় ওরা আমাকে মেরে ফেলত। আমার স্ত্রীর গায়েও হাত দিয়েছে ওরা। তার এ কান্না শুধু যে তার, তা নয়। এ কান্না বাংলাদেশের। ওয়াসিফ নিজেও কেঁদেছেন। গোটা দেশকে কাঁদিয়েছেন।
হাজী সেলিম পুত্র ইরফান সেদিন সংসদ সদস্য স্টিকার লাগানো গাড়ি নিয়ে বের হন। এ গাড়িই মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। একজন সংসদ সদস্যের গাড়ি কি অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারেন? না, পারেন না। তাহলে এখানে প্রমাণিত সংসদ সদস্যের গাড়ি নিয়ে সেখানে সব আকাম করতেন কাউন্সিলর ইরফান সেলিম। তাদের অত্যাচার, জুলুমের খবর এখন মানুষের মুখে মুখে। লালবাগে মানুষ জোরে শ্বাস নিতে পারতো না। দখল বাণিজ্যে কত মানুষ যে নিঃস্ব হয়েছে এর ইয়াত্তা নেই। হাজারো মানুষের হৃদয় ভেঙ্গেছে হাজী পরিবার। তাদের অব্যক্ত কান্না কেউ শুনেনি। কিন্তু উপর ওয়ালা একজন আছেন। তিনি ঠিকই শুনেছেন।
ইসলামপুরের এক ব্যবসায়ী আক্ষেপ করে বলেন, ইসলামপুরে যখন মানুষের জায়গা দখল করে গুলশান আরা সিটি বানায় তখন সেখানকার মালিকদের জোর করে উচ্ছেদ করে। তাদের কান্নায় তখন আকাশ কেঁপে উঠেছিল। কিন্তু ইরফানদের মন ভেজাতে পারেনি। জমি হারা পরিবারগুলোর চোখ দিয়ে পানি নয়, রক্ত ঝরেছিল সেদিন। কেউ এগিয়ে আসেনি তাদের পক্ষে।
ইরফানের আলাদা জগতের হদিস পেয়েছে র্যাব। ইরফান আন্ডারগ্রাউন্ডে কি করতেন জাতির সামনেও এখন পরিষ্কার। এই টর্চাল সেলে কত মানুষের রক্তের দাগ লেগে আছে ইরফানই জানে। কত মানুষের হাহাকার, আর্তনাদ চার দেয়ালে আবদ্ধ হয়ে আছে কে জানে? একজন লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ না হয়ে অন্য কেউ হলে হয়তো সেদিনই তার জীবনের শেষ দিন হতো। ইরফান নামক যমের হাতে প্রাণ দিতে হতো। এরপর এমনটা করতে পারায় উল্লাস করতো। পার্টি হতো। আর এ পার্টির আড়ালে চাপা পড়তো সব।
Leave a Reply