মিয়ানমারে বর্বর নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ঢাকায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনার লক্ষ্যে আগামী ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। চীনের উদ্যোগে বৈঠকটি হচ্ছে।
বুধবার সাংবাদিকদের এসব কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। যদিও মন্ত্রীর বরাত দিয়ে আগেই যুগান্তর এ সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যা আজ (১৩ জানুয়ারি) যুগান্তরের প্রিন্ট ও অনলাইন ভার্সনে ‘আট লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ’- শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।
মন্ত্রী বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হবে বলে আশা করি।
ড. মোমেন বলেন, গত বছর জানুয়ারিতে আমাদের মধ্যে যে বৈঠক হয়েছিল তাতে কিছুটা ডেভেলপমেন্ট হয়েছিল। মিয়ানমার এমনিতে কোনো কিছুর উত্তর দিতে চায় না। খালি বলে পরে জানাবে। এরপর করোনা ও তাদের দেশে নির্বাচনের অজুহাত দিয়ে বৈঠক করেনি। গত ৯ জানুয়ারি চীনের মধ্যস্থতায় সচিব পর্যায়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্ত মিয়ানমার সেটা পিছিয়ে দেয়। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই মুহূর্তে মিয়ানমার সফরে রয়েছেন। সেই কারণে মিয়ানমার বৈঠকটি পিছিয়ে দিয়েছে। সচিব পর্যায়ের ওই বৈঠকটি ১৯ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। এতে বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মিয়ানমারকে এ পর্যন্ত আট লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা আমরা পাঠিয়েছে। কয়েক দফায় তা পাঠানো হয়। সম্প্রতি পাঠানো হয়েছে দুই লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা। কিন্তু দুঃখজনক হলো মিয়ানমার খুব ধীরগতিতে এগোচ্ছে। দেশটির আন্তরিকতার খুব অভাব। তারা এ পর্যন্ত ৪২ হাজার রোহিঙ্গার পরিচয় যাচাই-বাছাই করেছে। এর মধ্যে প্রায় ২৮ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অধিবাসী ছিলো বলে স্বীকার করেছে। বাকি ১৪ হাজারের কোনো তথ্য মিয়ানমার তার তথ্যভাণ্ডারে নেই বলে জানিয়েছে। আগে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে তাদেরও বায়োমেট্রিক তালিকা তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মিয়ানমারে ২০১৭ সালের আগস্টে সেনা অভিযানের সময়ে নিষ্ঠুর নিপীড়নের শিকার হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তাদের ফেরত পাঠাতে একই বছরের ২৩ নভেম্বর দুদেশের মধ্যে চুক্তি সই হয়।
২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি সই হয় ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট। কিন্তু এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। নানা অজুহাত মিয়ানমার প্রক্রিয়াটির গতি ধীর করছে। রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্যে তাদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার শর্ত দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা এ দেশে চাপের সৃষ্টি করেছে।
এদিকে সেনা অভিযান ও উগ্র বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের তাড়া খেয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা আট লাখ ৩০ হাজার বলে নিবন্ধন করা সম্ভব হলেও আগে থেকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বাস করছে। তারা বিভিন্ন সময়ে অর্থনৈতিক কারণে বাংলাদেশে এসেছিল।
তাদের নিবন্ধন করেনি বাংলাদেশ। তাদের সংখ্যা তিন থেকে চার লাখ হবে বলে অনুমান করা হয়। ফলে বাংলাদেশে বর্তমানে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১১ লাখের বেশি। তারা সবাই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে এ দেশে এসেছেন।
Leave a Reply