1. iamparves@gmail.com : admin :
  2. najmulhasan7741@gmail.com : Najmul Hasan : Najmul Hasan
  3. janathatv19@gmail.com : Shohag Khan : Shohag Khan
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন

পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে অরাজকতা

অনলাইন ডেক্স
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২১

জ্বালানি তেলের দামের প্রভাব
পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে অরাজকতা
বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশে এখনই কমছে না * বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ২৭ ভাগ আদায় হচ্ছে প্রায় শতভাগ

জ্বালানি তেলের কারণে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা বিরাজ করছে। জ্বালানির জন্য পণ্যের দাম যতটা বৃদ্ধির কথা তার চেয়ে অনেক বেশি বাড়িয়েছে সরকারি সংস্থা। বাস্তবে সরকার নির্ধারিত বাড়তি দামের চেয়েও অনেক বেশি আদায় হচ্ছে। শুধু তেল নয়, সব খরচ ধরে ভাড়া নির্ধারণ করায় সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে অরাজকতা চরম আকার ধারণ করেছে। প্রায় প্রতিদিনই ভাড়া নিয়ে সংঘর্ষ হচ্ছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করলেও দেশের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো চিন্তাভাবনা নেই সরকারের। যদিও এর আগে জ্বালানি বিভাগ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলে দেশেও কমানো হবে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ৮০ ডলারের নিচে এই তথ্যই সঠিক নয়। এখনো ডিজেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ৮৯ ডলার। বিপিসির মতে, ডিজেল যখন ৬৫ টাকা লিটার ছিল তখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম ৭০ থেকে ৭১ ডলারের মধ্যে থাকলে তারা ব্রেক ইভেন্টে থাকত। এখন প্রতি লিটার ৮০ টাকা হওয়ায় বিপিসি লাভজনক। এই মুহূর্তে দাম কমালে ফের লোকসানে পড়বে সংস্থাটি।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, জ্বালানি তেলের প্রভাবে পণ্য পরিবহণ ভাড়া বেড়েছে লাগামহীন। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত প্রতি ট্রাকে প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে। অথচ জ্বালানি খরচ এত বেশি বাড়েনি।

জানা গেছে, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে একটি ট্রাকের জ্বালানি লাগে গড়ে ১৪০ লিটার। প্রতি লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়লেও ২১শ হয়। এটা আগের ভাড়ার সঙ্গে যোগ হবে। কিন্তু এখন ভাড়া বেড়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা।

ময়মনসিংহ থেকে একটি ট্রাকে কৃষি মার্কেটে চাল আনার জন্য প্রতি বস্তা ভাড়া ছিল ২০ টাকা। এখন তা বেড়ে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভাড়া বেড়েছে প্রায় শতভাগ। এভাবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে বেশি খরচ হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে বাজারে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আগে ট্রাক ভাড়া ছিল ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। কাভার্ডভ্যান মালিকরা দূরপাল্লার বাসের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ২৭ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর দাবি করেছেন। তাদের যুক্তি বাসের খরচ বেশি। পণ্য পরিবহণে ব্যবহৃত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে জ্বালানি খরচ কম লাগে। এজন্য এ খাতে ৮ থেকে ১০ শতাংশের বেশি ভাড়া বাড়ার কথা নয়। কিন্তু বেড়েছে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শতভাগ।

পরিবহণ ভাড়ার কারণে বাজারে মাছ, মাংস, শাকসবজিসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে গড়ে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ। শীতের সময় বাজারে সবজির দাম কম থাকলেও এবার তার প্রভাব এখনো পড়েনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের প্রভাবে ট্রাক ভাড়া কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বেড়েছে। ফলে সবজির দামও বেশি।

এ প্রসঙ্গে বিশ্লেষকরা বলছেন, জ্বালানি তেলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সংশ্লিষ্ট কোনো খাতেই ভাড়া সমন্বয় করা হয়নি। ফলে সব খাতেই দেখা দিয়েছে অরাজকতা। তেলের মূল্যের চেয়ে ভাড়া আরও অনেক বেশি বেড়েছে। একটি পরিবহণ বা নৌযান পরিচালনায় জ্বালানির খরচ কতটুকু তার ওপর ভাড়া বাড়ানোর কথা ২৩ শতাংশ। কিন্তু এ বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে মোট খরচের ওপর ভিত্তি করে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ২৬ থেকে ৪০ শতাংশ। যা মোটেও যৌক্তিক ছিল না।

খোদ পরিবহণ সেক্টরের একজন বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এজন্য সরকার দায়ী। কারণ লঞ্চ ও বাসের ভাড়া নির্ধারণ করে সরকার। এক্ষেত্রে সরকারি সংস্থাগুলোর এ বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল। যেহেতু জ্বালানি তেল ছাড়া অন্য কোনো খরচ বাড়েনি, সেহেতু সব খরচের ওপর ভিত্তি করে ভাড়া বাড়ল কেন? এ প্রশ্ন এখন সংশ্লিষ্টদের।

পরিবহণ মালিকরা বলছেন, শুধু জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির ওপর তাদের ভাড়া বাড়ানো হয়নি। পরিবহণ পরিচালনা ব্যয় আগেই বেড়ে গিয়েছিল। সর্বশেষ যোগ হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, সর্বশেষ বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ২০১৩ সালে। ২০১৯ সালে ভাড়া বাড়ানোর কথা ছিল। সবকিছু চূড়ান্তও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কার্যকর করা হয়নি। তার মতে, শুধু তেলের দাম নয়, বাস পরিচালনা ব্যয় যেমন ইন্স্যুরেন্স, ফিটনেস, আয়কর, টোলসহ সব খাতে দাম বাড়ানো হয়েছে। সবশেষে যোগ হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। যার কারণে বাস ভাড়া বেশি বেড়েছে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সরকারি সংস্থাই যদি ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ না করে তবে কে করবে? সরকার লঞ্চের ভাড়া ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ বাড়িয়েছে। বেসরকারি খাতের নৌযানের ভাড়া সরকার বাড়ায়নি। ওই খাতে বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। যা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১৫ শতাংশ কম। সরকার বাস ভাড়া বাড়িয়েছে সাড়ে ২৬ থেকে ২৭ শতাংশ। বেসরকারি খাতে পণ্য পরিবহণের ভাড়া যেগুলো সরকার নির্ধারণ করে না সেগুলোর ভাড়া বেড়েছে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ। যা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দেড় থেকে সাড়ে ১১ শতাংশ কম। অর্থাৎ সরকার যেসব খাতের ভাড়া নির্ধারণ করেছে সেসব খাতেই বেশি বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি মূল্য বাড়ানোর আগেই কোন খাতে কেমন খরচ বাড়বে তার একটি হিসাব সরকারের কেন্দ্র থেকে করা উচিত ছিল। সে বিষয়ে একটি ধারণা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আগে থেকেই দিয়ে দিলে ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে সমন্বয় থাকত। তার মতে, শুধু জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির কারণে কেমন খরচ বাড়বে তার ওপর ভিত্তি করে ভাড়া নির্ধারণ হওয়া উচিত ছিল। বাস্তবে সেটি হয়নি। হয়েছে পুরো খরচের ওপর ভিত্তি করে। এ সময়ে জ্বালানি তেল ছাড়া অন্য কোনো কিছুরই দাম বাড়ানো হয়নি।

প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রভাবে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ২৭ শতাংশ এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাড়ানো হয়েছে ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে বেড়েছে ৩০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত। এ নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। বাসের ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে আছে শুভঙ্করের ফাঁকি। বাসের পরিচালনা ব্যয়ের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ যায় জ্বালানি তেল বাবদ। বাকি খরচ অন্যান্য খাতের। কিন্তু ভাড়া বাড়ানো হয়েছে পুরো খরচের ওপর ভর করে। জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়েছে লিটারে ২৩ দশমিক ০৮ শতাংশ। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে বাসের প্রতিদিনের মোট পরিচালন ব্যয়ের ৩০ থেকে ৩৫ বাড়ার কথা। এ হিসাবে বাস ভাড়া ১০ থেকে ১২ শতাংশের বেশি বাড়ার কথা নয়। কিন্তু বাড়ানো হয়েছে সাড়ে ২৬ থেকে ২৭ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সেবা খাতের খরচ বেশি হলে মূল্যস্ফীতিতে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এজন্য সেবা খাতের খচর কম রাখতে হয়। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে সরকারকে এখন বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দিতে হবে। এ ভর্তুকি বিভিন্ন খাতে না দিয়ে এককভাবে জ্বালানি তেলে দিলে এ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতো না। মূল্যস্ফীতিতে ঝুঁকির মাত্রাও কমত। কিন্তু সরকার সেটি বিবেচনায় নেয়নি।

বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমেছে, বাংলাদেশে কখন কমবে : বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম আরও কমেছে। একদিনের ব্যবধানে অপরিশোধিত তেলের দর ব্যারেলপ্রতি ৭৬.১০ ডলারে নেমে এসেছে। এ দর গত দুই মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সংরক্ষিত তেল বাজারে ছাড়ায় বিশ্ববাজারে পণ্যটির দামে পতন লক্ষ করা যাচ্ছে। গত শনিবার অপরিশোধিত ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ব্যারেলপ্রতি ৭৬ ডলার ১০ সেন্টে বিক্রি হয়েছে। আর ব্রেন্ট ক্রুড তেল ৭৮ ডলার ৪৬ সেন্টে বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ও ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দর গত ছয় সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম।

সরকার এর আগে জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলে বাংলাদেশেও কমানো হবে। কিন্তু শনিবার পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বিপিসির মতে, গত ৩ মাসে তারা বিপুল অঙ্কের টাকা লোকসান দিয়েছে। বর্তমানে বিপিসি লাভে থাকলেও আগের লোকসান পুষিয়ে নিতে আরও সময় লাগবে। তবে তেলের আন্তর্জাতিক মূল্য এবং বিপিসির লাভ লোকসান প্রতিদিনই জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানো হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে কখন দাম কমানো হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:২২
  • ১২:২৮
  • ৫:০৩
  • ৭:১০
  • ৮:৩৩
  • ৫:৪৩