1. iamparves@gmail.com : admin :
  2. janathatv19@gmail.com : Shohag Khan : Shohag Khan
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩৬ পূর্বাহ্ন

কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সনদ জালিয়াতিতে অভিযুক্ত

জাককানইবি প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২২


জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের ডেমোনস্ট্রেটর (তবলা) মো: মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে উঠেছে সনদ জালিয়াতির অভিযোগ। ত্রুটিপূর্ণ সনদ সাবমিট এবং ব্যক্তিগত নথিতে একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টের অনুপস্থিতি যার স্বতঃসিদ্ধ প্রমাণ।

কর্মকর্তা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচয় পাওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তার সখ্যতা তৈরি হয় শিক্ষার্থী হিসেবে। মশিউর রহমান ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগে ভর্তি হন শিক্ষার্থী হিসেবে। অল্প দিনেই বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠার দরুন ২০১০ সালে এইচএসসি পাশের সনদ ব্যবহার করে নিজ বিভাগেই পেয়ে যান তবলা সহায়ক (বাদক) পদে চাকরি।

বিভাগের শিক্ষকের সুপারিশেই পেয়েছিলেন চাকরি, যার সত্যতা মিলেছে সে সময়ের বিভাগীয় প্রধান ড. রশিদুন নবীর কথায়। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় ভেতরে হওয়ায় কেউ আসতে চাইতো না। তখন তবলা বাদকের জন্যে সার্কুলার দেয়া হয়। সেসময় বিভাগের সহকর্মী শাকিল হাসমী আমায় বলেন মশিউরকে চাকুরিটা দেয়া যায় কিনা ব্যবস্থা করতে। (শাকিল হাসমী) বলেন, ‘ছেলেটা (মশিউর) অস্বচ্ছল, ভালো তবলা বাজায়, ওকে চাকুরিটা দিলে উপকার হবে।’ আমি সেই অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলি। সকলে এক সিদ্ধান্তে এসেই চাকরি দেয়ায় উত্তীর্ণ হয় মশিউর।”

একটা সময় পর মশিউর ছাত্রত্বও বাতিল করে নিলে এইচএসসি পাশের বাইরে আলাদা আর কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিলো না তার। তবে নিষিদ্ধ হওয়া বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ইবাইস ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে সম্মান সম্পন্ন করার সনদ জমা দিয়েছিলেন এই কর্মকর্তা।

অনুসন্ধান করে দেখা যায়, আপগ্রেডেশন পেয়ে হওয়া ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তা ডেমোনস্ট্রেটর (তবলা) এর সময়, জমা দেয়া সনদের কোথাও লিখা নেই অর্জিত জিপিএ এবং রেফারেন্স। এমন কি ব্যক্তিগত নথিতেও জমা নেই একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট। সনদে স্নাতক পাশের কথা লিখা থাকলেও নেই তার ব্যাপ্তিকাল।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, “সনদটি জালিয়াতি করে বানানো। কেননা সনদে পাশের সাল দেখানো ২০১৪, যখন বিভাগে কর্মরত ছিলেন মশিউর। চাকরিতে থেকে কোনোভাবেই স্নাতক করা সম্ভব নয়।” তাছাড়া কোন অনুমোদনও দেয়া হয়নি তাকে বলেও জানিয়েছে রেজিস্ট্রার ও বিভাগ সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ চলতি বছরের নভেম্বর মাসে সিনিয়র ডেমোনস্ট্রেটর পদে পদোন্নতির জন্যে বিভাগে আবেদন করলে বিভাগটির প্ল্যানিং কমিটি তা আটকে দেয়।

প্ল্যানিং কমিটির একাধিক সদস্য বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে জানান, “তার সনদটি দেখে আমাদের কাছে সন্দেহ লেগেছে। যার কারণে তার কাছে ট্রান্সক্রিপ্ট চাই আমরা যেটি সে এখনো দিতে পারেনি। তাই প্ল্যানিং কমিটি তার আবেদন গ্রহণ করেনি। সভায় তার ব্যক্তিগত নথির সন্ধান চাইলেও তা হারিয়ে গেছে বলে বিভাগকে জানানো হয় বলেও নিশ্চিত করেছে বিভাগটির প্ল্যানিং কমিটির সূত্র।”

এ বিষয়ে বিভাগটির প্রধান অধ্যাপক ড. জাহিদুল কবীর বলেন, “আপগ্রেডেশনের জন্যে আবেদন করেছিল মশিউর। জমা দেয়া সনদ ত্রুটিপূর্ণ মনে হওয়ায় তা প্লানিং কমিটি গ্রহণ করেনি। তবে এর সংকট আছে কিনা সেটি দেখবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিবিধি অনুযায়ী, ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তা হতে হলে তাকে স্নাতক পাশ হতে হবে। তবে মশিউর রহমান সেই নিয়মকে পরোয়া না করেই ৩য় শ্রেণী কর্মচারী থেকে হয়েছেন ২য় শ্রেনীর কর্মকর্তা।

তবে এই অভিযোগ মানতে নারাজ ডেমোনস্ট্রেটর মশিউর রহমান। তিনি বলেন, “আমি এইচএসসি পাশ করেই তবলা বাদক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেছি। পদন্নোতি পেয়ে হয়েছি ডেমোনস্ট্রেটর। আর এখানে আমার মূল সনদ রয়েছে। এটি জালিয়াতি করা নয়। আর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়েছে আমার পাশ করার অনেক পরে।”

সনদে জিপিএ’র সংখ্যা উল্লেখ নেই কেনো বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাইল। এভাবেই হয়।”

সনদের বিষয়ে জানতে ইবাইস (ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ইউনিভার্সিটি) ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে যোগাযোগের ঠিকানায় যোগাযোগ করে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

সঙ্গীত বিভাগের একজন শিক্ষক গণমাধ্যমকে জানান, “মশিউর রহমান যদি স্নাতক সম্পন্ন করে থাকেন তবে তাকে অবশ্যই ক্লাস-পরীক্ষা দিতে হয়েছে। তাহলে সেটি কখন কিভাবে করেছে? এই প্রশ্ন থেকেই সনদের ধরন কি তার উত্তর পাওয়া যায়। বিভাগ তার পড়াশোনার বিষয়ে অবগত নয়। আমাদের প্ল্যানিং কমিটিও বিভিন্ন বিষয় আমলে নিয়ে তার আপগ্রেডেশন সংশ্লিষ্ট সুপারিশ আটকে রেখেছে।”

বিভাগটির অধ্যাপক ড. রশিদুন নবী বলেন, “তার পড়াশোনা করার বিষয়ে আমি অবগত নই। বিভাগেই লোকবল কম ছিলো সে এর মধ্যে কোন সময়ে এসব করেছে সেটা আমাদের জানা নেই।”

তবে মশিউর রহমান শুরুতে এটি স্বাভাবিক স্নাতক পাশ বললেও সুর বদলে তিনি বলছেন এটি উইকেন্ড প্রোগ্রামের আন্ডারে করেছেন। তবে স্নাতক পর্যায়ে এই উইকেন্ড চালুর সত্যতা মেলেনি। এমনকি মশিউর রহমানের উপস্থাপন করা সাময়িক সনদের কোথাও এই প্রোগ্রামের কথার উল্লেখ নেই।

আরো নিশ্চিত হতে মশিউর রহমানের কাছে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ড আইডি চাইলে তিনি পরে দেখাবেন বলেও প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন। এমনকি মুঠোফোনে কল করে পুনরায় চাইলেও তা তিনি এড়িয়ে যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, “যাচাই-বাছাই না করে এভাবে আপগ্রেডেশন দিয়ে কর্মকর্তা বানানো হয়েছে তা আসলে অনুচিত। এতে এই ক্ষেত্রে অযোগ্যদের সম্মানিত করে সম্মানিতদের অসম্মানিত করা হয়। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ দেখিয়ে সেটি করা হয়েছি সেটি নিয়ে আমরা আগেও বিতর্ক শুনেছি। কিন্তু ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। কম শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও সে আজ কর্মকর্তার পরিচয় দিচ্ছে যা লজ্জার। এটি কেবল লজ্জার নয় সরকারের অর্থনৈতিক ক্ষতিরও কারণ।”

সনদ জালিয়াতির বিষয় নিয়ে রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, “আমাদের কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। আসলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে আইন অনুযায়ী। এই সকল ক্ষেত্রে বিভাগই মূলত সুপারিশ করে। এর আগে কিভাবে পেলো সেটিও যাচাই করে দেখতে হবে। এই বিষয়ে বিভাগ আমাদের জানালে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

সঙ্গীত বিভাগের ডেমোনস্ট্রেটর মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির অভিযোগের পাশাপাশি রয়েছে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, ড্রাইভার এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মেস মালিকদের থেকে ঔষধ ব্যবসায় পার্টনার করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পাইয়ে দেয়াসহ সুদে অতিরিক্ত অর্থ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দেড় কোটি টাকার অধিক অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:৪৩
  • ১২:৩০
  • ৫:০১
  • ৬:৫৮
  • ৮:১৭
  • ৫:৫৮