1. iamparves@gmail.com : admin :
  2. najmulhasan7741@gmail.com : Najmul Hasan : Najmul Hasan
  3. janathatv19@gmail.com : Shohag Khan : Shohag Khan
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০২:০০ অপরাহ্ন

গৃহকর্মী নির্যাতন : শেয়াল-শকুনের অপসংস্কৃতি

শফিক হাসান
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ২ আগস্ট, ২০২১

গৃহকর্মী নির্যাতন যেন প্রতিদিনকার সড়ক দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষের আহত-নিহত হওয়ার ঘটনার মতো প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে! গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে চলেছে প্রচুর। যে চিত্র চোখের সামনে আসে, এর বাইরেও থেকে যায় আরও ভয়ঙ্কর সব দৃশ্য। মনিব এবং এবং পৃথকভাবে মনিবপুত্র যে যৌন নিপীড়ন চালান সেটা কম সময়েই আলোচিত হয়। গৃহকর্ত্রীও সামাজিকতা এবং মানসম্মানের কথা ভেবে লম্পট স্বামী-পুত্রের অপরাধ চেপে যান। দেশে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও গৃহকর্মে নিয়োজিতদের বড় একটি অংশই নাবালক ও নাবালিকা। এরা সকাল-সন্ধ্যা নাস্তা-পানি ঠিকমতো না পেলেও চড়-থাপ্পড় ঠিকই পেয়ে যায়। অবশ্য সংখ্যায় অল্প ব্যতিক্রমও আছে। ঠিকা কিংবা স্থায়ী গৃহকর্মীদের মানুষের সম্মান দেন এমন মানুষও দেশে এখনো বিরল নন।শিক্ষিত লোকজনের নামও নির্যাতনকারীর তালিকায় চলে আসছে। এদের সত্যিকারের শিক্ষা, ভব্যতা-সভ্যতা ও রুচির বিষয়টিও ভাবতে হয়। শোকের মাস আগস্ট। শোকের মাসের প্রথম দিনেই এমন একটি সংবাদ এল সামনে, যার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরূপবাংলা জানাচ্ছে চিত্রনায়িকা একার আটক হওয়ার সংবাদ। তিনিও গৃহকর্মী নির্যাতনে পিছিয়ে থাকেননি; অন্য অনেকের মতোই ‘পারঙ্গমতা’র পরিচয় দিলেন!

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ঢাকা মহানগর পুলিশের হাতিরঝিল থানা পুলিশ চিত্রনায়িকা একাকে আটক করেছে। গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে তাকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। গত ৩১ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে রামপুরার নিঝুম এলাকায় চিত্রনায়িকা একার বাসা থেকে পুলিশ তাকে আটক করে। একাকে আটকের পর তার গৃহকর্মী হাজেরা বেগমকে (৩৫) চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসা শেষে গৃহকর্মী হাজেরা বেগম থানায় এসে অভিযোগ দিলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানায় পুলিশ।

‘অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে’ এমন পরিস্থিতিতেই ধামাচাপা পড়ে যায় অনেক অপরাধ। সাধারণ মানুষ, যাদের পেটের ব্যবস্থা ও পিঠের ব্যবস্থা করার জন্যই কাটে অহর্নিশ, সচরাচর এরা বড় কোনো ঝুটঝামেলায় যেতে চায় না। আর যারা এদের মাথার ওপর ‘মনিব’ হয়ে আছে, তারা এখানে-ওখানে টাকা খরচ করে সহজেই বন্ধ করে ফেলতে পারে অনেকের মুখ। কথিত আছে, থানার দেয়ালের ইট-পাথরও ঘুষ খায়। দেয়াল যেদিন ঘুষ খাওয়া বন্ধ করবে, সেদিন সুবিচার পেতে শুধু করবে সাধারণ মানুষ। স্বাভাবিকভাবেই কমে আসবে অপরাধের মাত্রা।চিত্রনায়িকা একা পুলিশি জিজ্ঞাসার মুখে রয়েছেন, এটা আমরা জেনেছি। এক সপ্তাহ কিংবা একমাস পরে এ বিষয়ে একা সংবাদ শিরোনাম হবেন কি না আমরা জানি না। কারণ অনেক সংবাদই কুঁড়িতেই শেষ হয়ে যায়। ফলোআপের প্রয়োজন হয় না কিংবা সংশ্লিষ্টরাও ‘তুচ্ছ’ ভেবে মাথাও ঘামান না।এর আগে ঢাকাই সিনেমার তৃতীয় শ্রেণির নায়ক-নায়িকা মেহেদী ও ঝুমকার বিরুদ্ধেও উঠেছিল একই অভিযোগ। খুন্তি গরম করে গৃহকর্মীকে ছ্যাঁকা দিতেন এরা। গুলশানের একটি বাসায় লিভ টুগেদার করতেন অশ্লীলতার ক্ষেত্রে অভিযুক্ত এই দুই শিল্পী। সেই অভিযোগে তাদের বড় কোনো শাস্তি হয়েছে এমন কথা শোনা যায়নি। গৃহকর্মী নির্যাতনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে এমন কোনো নজিরও আমাদের সামনে নেই। কেন নেই? প্রশ্নটা সহজ, উত্তরটা আরও সহজ! বাদী এবং বিবাদী যদি সমান সমান না হয় আইন একদিকেই হেলে পড়তে বাধ্য!মেহেদী-ঝুমকা থেকে আয়শা আরবী একা দীর্ঘ এই পথপরিক্রমা। এতটুকুও পাল্টায়নি অপসংস্কৃতি। লক্ষ করুন, চলচ্চিত্র হচ্ছে সবচেয়ে বড় শিল্পমাধ্যম। সেই হিসেবে এর শিল্পীরাও নিশ্চয়ই বড় সম্মানের আসনে আসীন। কথা হচ্ছে, কেমন শিল্পী তারা! যে শিল্পচর্চা তাদের ভেতরে সুকুমারবৃত্তিই রাখে না, জাগ্রত থাকে না বিবেকের বাতায়ন! রঙিন পর্দায় যে সততা ও নৈতিকতার বুলি এরা আওড়ান, ধরে রাখেন ‘সৎ মানুষের’ অবস্থান, বাস্তবে সেটার প্রতিফলন ঘটাতে পারেন না কেন! মনুষ্যত্বকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে দানবসত্তাকে কেন সামনে নিয়ে আসতে হয়, বারবার।এরা বিচ্ছিন্ন ধারার নন। ব্যতিক্রমী অপরাধীও নন। এমন আরও অনেকেই আছেন গৃহকর্মীকে নির্যাতন করেন নানাভাবে। পান থেকে চুন খসলেই খুন্তির ছ্যাঁকায় ঝলসে দেওয়া হত মেয়ে শিশুকর্মীর পিঠ, এমন দৃশ্যও আকছার দেখেছি আমরা। বছর দুয়েক আগে নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ওয়াশরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে পালাতে চাওয়া এক গৃহকর্মীর কথা নিশ্চয়ই আমরা ভুলে যাইনি। পথচারীদের নজরে পড়ায় বিষয়টি আলোচিত হয়েছে।দারিদ্র্যসীমার নিচে যাদের বসবাস, মূলত তারাই অন্যের বাসা-বাড়িতে কাজ করতে যায়। বাড়িতে পরিবারের ভরণপোষণের জন্যও টাকা পাঠাতে হয়। তাই এরা পেটে খেয়ে পিঠে সওয়ার চেষ্টা করে। মুখ বুজে সয়ে যায় সব নির্যাতন-অপমান-গ্লানি। কালে-ভদ্রে দুই-একটি ঘটনা ফাঁস হয়ে গেলেও কোথাও বর্ষাদিনে বৃষ্টিজল পতনের মতো ‘টুপ’ শব্দটিও হয় না। তার আগেই সব ম্যানেজ হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়ায় আইনের হাত ঢুকে পড়ে অন্ধকারে।

এরা বিচ্ছিন্ন ধারার নন। ব্যতিক্রমী অপরাধীও নন। এমন আরও অনেকেই আছেন গৃহকর্মীকে নির্যাতন করেন নানাভাবে। পান থেকে চুন খসলেই খুন্তির ছ্যাঁকায় ঝলসে দেওয়া হত মেয়ে শিশুকর্মীর পিঠ, এমন দৃশ্যও আকছার দেখেছি আমরা। বছর দুয়েক আগে নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ওয়াশরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে পালাতে চাওয়া এক গৃহকর্মীর কথা নিশ্চয়ই আমরা ভুলে যাইনি। পথচারীদের নজরে পড়ায় বিষয়টি আলোচিত হয়েছে

অপরাধ দমনে যদি আমরা আন্তরিক হই, সবার আগে বন্ধ করতে হবে ক্ষমতা তোষণ; পদ-পদবি লেহন। বন্ধ করতে হবে ঘুষ সংস্কৃতি। অপরাধ বন্ধে শিক্ষাভবনে সিসি ক্যামেরা লাগাতে আমরা দেখেছি। এই আদলে প্রতিটি থানায়ও সিসি ক্যামেরায় লাগানো যায়। ঘুষ কিংবা অনৈতিক অন্য কোনো লেনদেনের একটা রেকর্ড যেন থাকে। টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপের অপরাধের যত ফিরিস্তি বেরোচ্ছে এখন, তাকে, অনেক মানুষকে এবং দেশকে সুরক্ষা দিতে বেশি কিছুর দরকার ছিল না। একটি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ওসি প্রদীপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারত; দেখতে হত না মেজর সিনহা মো. রাশেদ হত্যাসহ এত খুনোখুনিও।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অন্যায় পথে পরিচালিত করে যারা, এরা নিশ্চয়ই আরও বড় অপরাধী; ঘৃণ্য দুর্নীতিবাজ। আমরা দুর্নীতিমুক্ত দেশ চাই মুখে মুখে, স্লোগানে স্লোগানে কিন্তু মূলোৎপাটনে কাজ করি না। গোড়ায় নজর দিই না। অপরাধীকে মাথায় তুলে নাচি। পাপাচারীদের যদি সামাজিকভাবে বয়কট করা যায়, স্বীয় কুকর্মের জন্য নিগৃহীত হতে হয় তাদেরÑ এমন বেপরোয়া দাপট ও ‘রাজার হাল’ নিশ্চয়ই থাকবে না। রাজপথে গলিপথে প্রতিটি মোড়ে মোটে ছবি ঝুলিয়ে রাখা হোক অপরাধীর ছবি। তিনি যত ক্ষমতাধরই হন না কেন!অদ্ভুত এক আঁধার পৃথিবীতে আসার কথা বলেছেন জীবনানন্দ দাশ। আঁধারের কথা বলতে বলতে শেষে এই সিদ্ধান্ত উপনীতি হলেন তিনি ‘শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ মানুষের হৃদয়’। এই কাব্য-পঙ্ক্তি কত আগের; এখনো সমান প্রাসঙ্গিক। এত কষ্টে পাওয়া স্বাধীনতা এমন স্বল্পে মূল্যে বেহাত হতে দেওয়া কি ঠিক! এই শোকের মাস আগস্টে নিজেদের যাবতীয় ব্যর্থতার কথা ভেবে আমরা কাঁদতে পারি আরেকবার। আত্মশুদ্ধির জন্য কান্না। জল কি পাপ ধুয়ে নেয়? না নিলেও নিশ্চয়ই পরিষ্কার করবে মনের কালিমা।গৃহকর্মী নির্যাতনকারী একা কিংবা অন্য সব বীরপুঙ্গব ও বীরাঙ্গনা যেন সঠিক সাজা পান, তাদের কৃতকর্ম যেন মানুষ জানতে পারেÑ প্রচারমাধ্যম এই কাজটুকু করুক। প্রচারমাধ্যমে ঘুমিয়ে পড়লে কিংবা ঢিল দিলে অন্ধকারের বাসিন্দারা ঠিকই প্রেতনৃত্য করবে। সেই সুযোগ তাদের দেওয়া হবে আরেকটি অবিবেচনাপ্রসূত কাজ!
শফিক হাসান : সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

অপরুপ বাংলা থেকে সংগৃহীত

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:২৫
  • ১২:২৮
  • ৫:০২
  • ৭:০৭
  • ৮:৩০
  • ৫:৪৬