1. iamparves@gmail.com : admin :
  2. najmulhasan7741@gmail.com : Najmul Hasan : Najmul Hasan
  3. janathatv19@gmail.com : Shohag Khan : Shohag Khan
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০১:২৬ অপরাহ্ন

সমন্বিত পরিকল্পনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিন

সফিউল আযম
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ২৯ মে, ২০২১

করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ায় গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে স্কুল, কলেজসহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হলেও আজ অব্দি চালু হয়নি। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভয়াবহ ক্ষতি থেকে কিছুটা হলেও উত্তরণের জন্য সীমিত পরিসরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। যদিও গত ২৬ মে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী আভাস দিয়েছেন প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৩ জুন খুলে দেওয়ার বিষয়টি ভাবছে সরকার। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীকে টিকা নিশ্চিত করার পর। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়টি এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নয়, যা নির্ভর করবে সার্বিক বিষয়ের উপর।

কিছুদিন আগে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কৌতুহলবশত বিভিন্ন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে একান্তে আলাপের সুযোগ হয়। সবার মধ্যেই দীর্ঘশ্বাস আর কান্না। গ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থা বলা যায় অনেকাংশেই ভেঙ্গে পড়েছে। গণস্বাক্ষরতা অভিযানের সাম্প্রতিক জরিপে উঠে এসেছে, দীর্ঘ সময় অনলাইন ও সংসদ টিভিতে ক্লাস চললেও ডিভাইস ও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ৬৮% শিক্ষার্থীর কাছে সেই সেবা পৌঁছায়নি। দীর্ঘদিন শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে থাকার কারণে এখন ৭৫% শতাংশ শিক্ষার্থী এবং ৭৬% অভিভাবক চাইছেন স্কুলগুলো স্কুলে দেয়া হোক।

গ্রামের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কথা বলি, তিনি জানান এবছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী ১৮৬ জনের মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়েও মাত্র ১০১ জন শিক্ষার্থীকে রেজিস্ট্রেশন করাতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি আরো জানান, এই ১০১ জন শিক্ষার্থীকে শেষ পর্যন্ত পাওয়া যাবেনা। কারণ বেশিরভাগই শিক্ষকের অনুরোধে রেজিস্ট্রেশনে অংশ নেন। সম্প্রতি প্রকাশিত এডুকেশন ওয়াচের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাথমিকে ৩৮ শতাংশ শিক্ষক মনে করেন, বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যেতে পারে। ২০ শতাংশ মনে করেন, ঝরে পড়ার হার বাড়বে এবং ৮.৭ শতাংশ মনে করেন, শিক্ষার্থীরা শিশুশ্রমে নিযুক্ত হতে পারে। মাধ্যমিকে ৪১.২ শতাংশ শিক্ষক মনে করেন, বেশি শিক্ষার্থী ক্লাসে অনুপস্থিত থাকতে পারে। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে এখনই প্রয়োজন বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ। আগামী বাজেটেও পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে।

বিজ্ঞাপন

অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানতে পারি, পড়াশোনা না থাকায় ঢাকায় পাড়ি জমান। একটি গ্যারেজে চাকরি নেন। সামান্য আয়ে দরিদ্র পরিবারকে কিছুটা হলেও সহায়তা করতে পারে। শিক্ষার্থী জানায়, তার পরিবার আর তাকে পড়ালেখায় ফিরানোর সুযোগ কম। সেও টাকা পয়সা ও আয়ের পথ পাওয়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে পড়ালেখায়। একথা ঠিক যে, করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশুশ্রমের হার অনেক বেড়ে যাবে। আগের মতো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে দেখা যাবে না। আগের বছরগুলোর চেয়ে এবার ঝরে পড়ার হার নিশ্চিতভাবেই বাড়বে।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা করোনাকালে বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়েছে, তাদের অনেকেই আর স্কুলে ফিরবে না। সেজন্য পরিবারগুলোকে প্রণোদনা দিয়ে হলেও স্কুলমূখী করার ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। ২০১৯ সালে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ছিল ১৭.৯ শতাংশ আর মাধ্যমিকে এই হার ছিল ৩৭.৬২ শতাংশ। করোনার কারণে পরিবারে অভাবের কারণে শিশুরা ঝুঁকেছে শ্রমের দিকে। এসডিজি অর্জনে সরকার শিশুশ্রম নিরসনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম ও ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম বন্ধের পরিকল্পনা সরকারের থাকলেও বাস্তবে কতটা সম্ভব, তা আজ প্রশ্নের উদ্রেক করে।

ঢাকায় এক প্রতিবেশি জানান, নিজের সন্তানকে আগে মোবাইল, ট্যাব কিংবা ল্যাপটপ হাতে তুলে দিতেন না। কিন্তু অনলাইন ক্লাস করতে করতে তারা মোবাইলে এখন অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে। সারাদিন বাসায় থাকতে থাকতে মানসিকভাবেও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত। বিভিন্ন গেমসের উপর আসক্তি বেড়েছে। খিটখিটে মেজাজ সারাদিন থাকে। চাঁদপুরে সপ্তম শেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, গত দেড় বছর ধরে তিনি বাড়িতে তার ছেলেকে পড়ার টেবিলে বসাতেই পারছেন না। এদিকে গ্রামের স্কুলে কোনো ধরণের অনলাইন ক্লাশও নেই। সারাদিন ঘুরে বেড়ায়। রাতে বাসায় ফিরলেও পড়ার টেবিলে নেয়া যায় না। এমনকি প্রহার করলেও না। এমন অবস্থায় এই অভিভাবক বুঝে উঠতে পারছেন না কি করবেন। একথা ঠিক যে, দীর্ঘসময় বাড়িতে থাকায় শিশুদের মানসিক গঠনে নেতিবাচক প্রভাব পরছে। তারা অনেকাংশে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে। তাদের মধ্যে উদ্বিগ্নতা, আতঙ্ক, বিষণ্ণতা, হতাশা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আচরণগত সমস্যা দেখা যাচ্ছে। সন্তানের এই আচরণগত দিকটির প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে।

ব্র্যাক, ইউএন উইমেন এবং নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির যৌথভাবে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায় করোনাকালে বিয়ের মধ্যে তিন চতুর্থাংশ বা ৭৭ শতাংশ কনের বয়স ১৮ বছরের নিচে, যা ২০১৮ সালে জরিপকৃত জাতীয় বাল্যবিয়ের হার ৫১ শতাংশ এর চেয়েও ২৬ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বাল্যবিয়ের অবস্থা দ্রুত বিশ্লেষণ: করোনাকাল ২০২০’ বিষয়ক জরিপ প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতি বছর বাংলাদেশের ৫১ শতাংশ নারীর বিয়ে হয় ১৮ বছরের আগে। বাল্যবিয়ের এই চর্চা সামাজিক ও প্রথাগতভাবে হয়ে থাকে। তবে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে আরও নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাত মাসে বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে ১৩ হাজার ৮৮৬ টি। যেকোনও সময়ের চেয়ে এই মাত্রা অনেক বেশি। বিদ্যালয় বন্ধ থাকার মারাত্মক কুফল এই বাল্যবিবাহ। এই সামাজিক ব্যাধি দূর করতে এখনই কর্মপরিকল্পনা করতে হবে।

এডুকেশন ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়. দ্রুত ক্লাসে ফিরে যেতে চায় ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। ৭৬ শতাংশ অভিভাবক ও ৭৩ শতাংশ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দ্রুত স্কুল খোলার পক্ষে মত দিয়েছেন। ৫৮ শতাংশ শিক্ষক ও ৫২ শতাংশ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা একই মত দিয়েছেন। ৮২ শতাংশ শিক্ষক স্কুল খুলে দেওয়ার আগে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা তথা মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। শিক্ষা ব্যবস্থা ঠিক রাখতে ধাপে ধাপে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা প্রয়োজন। এই কাজটি যত দ্রুত করা যায় ততই দেশের জন্য মঙ্গল হবে।

প্রতিটি শ্রেণির সিলেবাস যেহেতু শিশুদের বয়স ও বিকাশ অনুযায়ী তৈরী করা, সুতরাং কোনো রকম পড়াশোনা ছাড়াই পরবর্তী ক্লাশে উঠা শিশুর সঠিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। পরবর্তী শ্রেণিতে পড়ার ধারাবাহিকতা না পেলে শিক্ষার্থীদের সামনে এগিয়ে যাওয়া অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হতে পারে। তবে বিদ্যালয় খোলার আগে ক্লাশভিত্তিক সিলেবাস পর্যালোচনা করে অতি প্রয়োজনীয় বিষয় ও অধ্যায়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে সংক্ষিপ্ত পাঠক্রম তৈরী করা প্রয়োজন। সরকার ইতোমধ্যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করেছে বলে জানা যায়, কিন্তু সেটি গ্রামের শিক্ষার্থীদের পারিপাশ্বিক অবন্থার বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। শহর কিংবা মফস্বলের শিক্ষার্থীরা কিছুটা হলেও পড়াশোনায় থাকলেও গ্রামের শিক্ষার্থীর এসব থেকে বঞ্চিত।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া, শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ এবং শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার, সামাজিক অস্থিরতা, মাদকের ভয়াবহতা, মানসিক স্বাস্থের অবনতি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে না পারলে বাংলাদেশ নারী শিক্ষা, মাতৃমৃত্যু, শিশুশ্রম রোধ ও বাল্যববিাহ রোধে যেসব অর্জন ইতোমধ্যে সারাবিশ্বে সুনাম অর্জন করেছে তা নিমেষেই শেষ হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর শিক্ষা ব্যবস্থার এমন ক্ষতি কখনো হয়নি। এখন প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ।

লেখক : সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক।
Safiul.azaam@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:২৫
  • ১২:২৮
  • ৫:০২
  • ৭:০৭
  • ৮:৩০
  • ৫:৪৬