1. iamparves@gmail.com : admin :
  2. najmulhasan7741@gmail.com : Najmul Hasan : Najmul Hasan
  3. janathatv19@gmail.com : Shohag Khan : Shohag Khan
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৬:১৩ অপরাহ্ন

ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ারের বদলি, অতঃপর…

জোবায়ের মিলন
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০২০
ফাস্টবিডিনিউজ পড়তে ক্লিক করুন WWW.FIRSTBDNEWS.COM ছবি:সংগৃহীত

‘র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমকে বদলি’ (যুগান্তর অনলাইন, ৯ নভেম্বর ২০২০) সংবাদে উদ্বৃত হয়েছে, ‘র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমকে বদলি করা হয়ছে। সোমবার তাকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে বদলি করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আলিয়া মেহের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ দেওয়া হয়।

সংবাদটি দৃষ্টিগত হওয়ার পর মন খারাপ হয়েছে। কেন হয়েছে তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। একজন সরকারি কর্মকর্তা কর্মজীবনে নানান ক্ষেত্রে কাজ করবেন। কাজের প্রয়োজনে ও কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনে তাকে নানান জায়গায় বদলি করা হবে এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ নিয়ে কারও মন খারাপ বা মন ভালোর মতো কোনো বিশেষ কারণ দেখি না। কিন্তু ‘মনের সঙ্গে বাক্য চলে না’ বলে একটি কথা আছে। পেশাজীবী হিসেবে বা দায়িত্বরত কাজে কর্মরত হিসেবে আগা ও গোড়া সবকিছু পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারলেও মন হয়ে আছে মলিন। হেমন্তের কড়ামিঠে রোদের তাপে গলছে না বরফ। মন ভার হয়ে আছে।

সারোয়ার আলম ২০১৫ সাল থেকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পদ গ্রহণ করার পর থেকে খাদ্যপণ্যে ভেজালবিরোধী আন্দোলন, নকল ওষুধ, তারিখবিহীন প্রসাধনী ও দুর্নীতিবিরোধী বিশেষ অভিযানের সময় ব্যাপক সাহসী ভূমিকা পালন করে আলোচনায় আসেন। যুবলীগ নেতা ক্যাসিনো-ডন ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন বড় বড় নেতাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে সারা দেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার এ কৃতি সন্তান। সর্বশেষ হাজী সেলিমপুত্র ইরফান সেলিমকে গ্রেফতার ছিল তার সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা।

দফতরে বা বিভাগে তার কেমন পরিচিতি বা আলোচনা তা জানি না। দেশজুড়ে সারোয়ার আলম ‘ব্র্যান্ড নেম’-এর মতো একটি নামে পরিণত হয়েছিলেন। নগরে-গ্রামে-গঞ্জে তাকে সাধারণ লোক ‘র‌্যাবের সারোয়ার’ নামেই একে অপরের সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দিত। শুনেছি। যদিও কেউই সারোয়ার আলমকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না এবং কখনো সম্মুখে দেখেনওনি। কিন্তু তারা নিজের মতো করে তার নাম উচ্চারণ করেন বুকভরে। বিশ্বাসের নিঃশ্বাসস নিয়ে। তারা এমন করে নামটি বলেন, যেন সারোয়ার আলম তাদের খুব কাছের জন। অজপাড়াগাঁয়ের ভিতরে চায়ের দোকানে বসে লোকজনকে তাকে নিয়ে আলোচনা করতে দেখেছি এবং তাদের প্রকাশে এমন আন্তরিকতা ও বিশ্বাস দেখে সত্যি বিস্মিত হয়েছি। অনেকের সঙ্গে তখন কথাও বলেছি ব্যক্তিগত ইচ্ছায়। এ কর্মকর্তার সুনামে খুশি হয়েছি।

বর্তমান যে সময় সেতুটি পেরিয়ে চলছি, সময়টিকে সুসময় বলা যায় না নানান কারণে। কারণগুলো উহ্য থাকুক। কিছু কিছু কারণ যেমন ব্যথিত করছে, কিছু কিছু কারণ বিস্ময়ে ভরে তুলছে। ভোর হলেই কুসংবাদ দিয়ে শুরু হচ্ছে দিনের যাত্রা। সুসংবাদ নেই, তা বলছি না। সু-কে ছাপিয়ে কু-এর দানবিক অগ্রসরতা কাঁপিয়ে তুলছে। সমাজে প্রেক্ষাপটে বিশৃঙ্খলতা ‘পিরানহা’ মাছের মতো হা হয়ে আছে যেন পা পিছলে গেলেই সূঁচালো দাঁতের ফাঁদে পতন! নৈতিকতার অধঃপতন আর অবক্ষয়ে অনৈতিকতা হাতের মুঠোয়, চোখের ইশারায়, ইঙ্গিতে। কথায় কথায় মিথ্যা, অসত্য, উগ্রতা, অপভ্রংশ উজ্জ্বল হয়ে ঘিরে আছে চার দেয়াল। অস্থিরতা মননে, মগজে, মাংসে। হাড়ে হাড়ে উত্তেজনা। একটি কথা এদিক থেকে ওদিক হলেই তুলকালাম কাণ্ড। পক্ষ আর বিপক্ষের তুমুল যুদ্ধ। কে কাকে কীভাবে কোণঠাসা করবে, কে কাকে মাড়িয়ে উচ্চে উঠবে সে প্রতিযোগিতা চলছে তুখোড় গতিতে। সৃষ্টিশীলতায় নয়, ধ্বংস আর বিনাশের দিকেই নজর অধিকাংশের। রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি আর সবলের জোর-জবরদখল সবখানে। মানবিক, মানসিক, বুদ্ধি, বিবেচনা এখন মৃত নদীর ডাক নাম। দাদির মুখে শোনা গল্পের মতো! প্রত্যেকের মুখে হাসির রেখা লেগে আছে বটে, ভিতরে ছুরির টানে রক্তপাতের নহর বইছে নিশ্চুপে। কেউ কারও কাছে বলছে না ভিতরের কথা। অনিচ্ছায় কথা চেপে রাখতে রাখতে প্রত্যেকের চোখে অসুস্থতার ছাপ। অসুখীর ছবি।

সময় যখন এমন, বাজার সয়লাব নষ্ট, ভেজাল, পচা পণ্যে। চোর, বাটপার, ঠকবাজ, প্রতারক, মুখোশদারী কাক-কোকিলের পালক গায়ে গণমানুষ। আইনে, আদালতে, অফিসে, স্টেশনে, পাড়ায়, মহল্লায়, ঘরে, বাহিরে সবখানে অবিশ্বাসী নিঃশ্বাসস। দেশের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য, সমাজের জন্য, মানুষের জন্য সুবোধ মানুষ পাওয়া কেবল কষ্টকরই নয়, অত্যন্ত কঠিন। হাত বাড়ালেই হাতের নিচে ধরা পড়ে হাতহীন মানুষ। মাথাহীন হীণ মানুষ। কারও প্রতি কারও আশ্বস্ততা নেই, বিশ্বস্ততা নেই। আপন সঙ্গীতে অসুরের সুর তুলে প্রত্যেকে বিচরণ করছে নিজের মতো স্বেচ্ছাচারী বলয়ে। কেউ কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না একে অন্যের সীমায়। আর ঢোকাতে পারলে কতল করছে হিংসায়, বিদ্বেষে, স্বার্থের ছুরিতে। রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিও হালকালের মানুষের নির্ভরশীলতা দিন দিন কমে এসে এমন এক জায়গায় ঠেকেছে, রাষ্ট্রের কাঁধেও হাত রাখতে ভয় করছে অবল মানুষ। কেন ভয় করছে জানি না। তা পরখ করে দেখার বিষয়। গবেষণার বিষয়। রাষ্ট্র তা জানে কিনা জানি না। জানলে এক্ষুণি মাঠে নামা দরকার। কিন্তু মানুষ নড়ে যাচ্ছে। অসহায় হয়ে পড়ছে। আস্থা রাখতে পারছে না। ব্যাংক লুট, ব্রিজ লুট, দালান লুট, রাস্তা লুট, সড়ক লুট, হাসপাতাল লুট, বিমানবন্দর লুট, স্থলবন্দর লুট, কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, বিদেশ পলায়ন, খাদ্যে বিষ, পণ্যে বিষ, দেখভালহীন পরিস্থিতি, বড় বড় কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা, ড্রাইভারের হাজার কোটি টাকা, মেথরের লাখ লাখ টাকা, চোরের মার বড় গলা, অস্থিরতা, অরাজকতা, যাচ্ছে তাই অবস্থা, মানুষের জীবনযাপন পতনের দিকে পড়া আর বিচারহীনতা বা বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বৃদ্ধি বা অপরাধীর অবাধ বিচরণে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ পরিত্রাণের ইচ্ছায় পাগলপ্রায়।

এমন যখন, তখন সাধারণ মানুষ যদি কোথাও একটু ছায়া পায়, তার প্রাপ্যটাই পায় তবু শুকরিয়া আদায় করে। যার মাধ্যমে পায় তার মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে। দীর্ঘায়ু কামনা করে। কোথাও যদি তারা পরিত্রাণ পায় তারা সুখের শ্বাস ফেলে। রাষ্ট্র দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পায়। ভালোবাসার মা-মাটিতে শকুনের থাবার জ্বালা থেকে শান্তি পায়।

আর এ কারণেই হাজার হ-য-ব-র-ল এর মধ্যে শান্তির দূত হয়ে যখন কেউ উজানে ভেসে ওঠেন তখন অতিসাধারণ জনরা আশার আলো দেখতে পান। তারা ধরে নেন, নূহের নৌকা। এই বুঝি কেউ এলো অন্যায়, অত্যাচার, চুরি, লুট থেকে ন্যায়কে ফিরিয়ে আনার। চুরি লুট থামাবার। সে কোন জন বা কে তা সাধারণ মানুষ জানতে চায় না। তারা দেখতে চায় একজন এমন মানুষকে যে বর্ম হয়ে অরাজকতা ও অত্যাচারের বিপরীতে দাঁড়ায়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম যখন একে একে অভিযান চালিয়ে পাকড়াও করছিলেন সকল বদমাশদের, চোরদের, ডাকাতদের, মুখোশধারীদের, জবরদখলধারীদের; ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠলেন নায়ক। আগেও এরকম দুএকজনকে দেখা গেছে, তারাও এমন প্রীতি পেয়েছেন। সাধারণের ভালোবাসা পেয়েছেন। প্রার্থনা পেয়েছেন। যেমন পাচ্ছেন সারোয়ার আলম। চলতি পথে অনেককে বলতে শুনেছি, ভালো কাজ করছেন, তাই সরকার সরিয়ে নিয়েছে। সাপোর্ট করেনি।

মন্দ কাজের জন্য সরকার অন্য কাউকে এ কাজে পাঠাবে এটি কখনো না। কাজের প্রক্রিয়ায় স্থান বদল করা হয়, হয়েছে। তবে প্রত্যাশা, সরকার সারোয়ার আলমের মতো অন্য কাউকে পাঠাবেন, যার হাতেও একই শক্তি দেখা যাবে। চোখে দেখা যাবে রাষ্ট্রপ্রেমের দীপ্ত আলো। বড় আফসোস হয়। সরকারি সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যদি ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের মতো এমন সৎ, সুন্দর, সাহসী কর্মকর্তা পাওয়া যেত তবে সাধারণ মানুষের আর কোনো দুশ্চিন্তা থাকত না, অশান্তি থাকত না। খাদ্যে ভেজাল থাকত না। দুই হাজার কোটি টাকা লুট করার লোক থাকত না। রিজেন্ট হাসপাতাল খোলার লোক থাকত না। হরিলুট হতো না বেসিক ব্যাংক। কিংবা ফারমার্স ব্যাংক। অথবা বালিশ কাহিনি বা করোনায় নাস্তা কাহিনির মতো হাজার হাজার কাহিনি। রাষ্ট্র রক্ষা পেত বহু কুকর্মের ওস্তাগরী থেকে। রাষ্ট্রকে, সরকারকে তাই ভাবতে হবে। ভাবনার সময় মনে হয় হয়েছে।

একজন সারোয়ার আলমকে কেন্দ্র করে বোঝার বোধ হয় সুযোগ হয়েছে। রাষ্ট্র চাইলে দেখতে পারে, সারোয়ার আলম বা তার মতো কর্মকর্তাদের কেন সাধারণ মানুষ বুকে টেনে নেয়। যে কারণে সাধারণ মানুষ সারোয়ার আলমদের পছন্দ করে সরকার চাইলে সে কাজগুলো আরও সফলভাবে সম্পন্ন করে মানুষের শ্রদ্ধা ভালোবাসা গ্রহণ করতে পারে। কাজে লাগাতে পারে। অনুরোধ, দায়িত্বপূর্ণ জায়গায়, গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়, দরকারি জায়গায় সারা বিভাগ থেকে খুঁজে খুঁজে সারোয়ার আলমের মতো বলিষ্ঠ, নিষ্ঠ অফিসারদের বসান। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে, দফতরে, বিভাগে আবর্জনাগুলো সরিয়ে ভালো কর্মীদের স্থান দিন। নজর রাখুন। প্রেরণা দিন।

দেশের চেহারা বদলাতে সময় লাগবে না। রাষ্ট্র একটি সুগন্ধী ফুল হয়ে ফুটতে দেরি হবে না। আজ মরলে কাল দুদিন। কী লাভ ক্ষমতা, শক্তি, দম্ভ আর টিকে থাকার লড়াইয়ে যুদ্ধবাজ হওয়ার? তার চেয়ে একটি মনে রাখার মতো কাজ করে যেতে পারলেই তো কীর্তি। কিতুই কি সঙ্গে নিয়ে যেতে পারব? না। তাহলে কেন এত ভোগের তৃষ্ণা? বোধ উদয় হোক সকলের। ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম, যেখানেই বদলি হন, যেখানেই কাজ করেন আপনি ও আপনার মতো কর্তব্যবান মানুষরা ভালো থাকবেন। মানুষের ভালোবাসা আপনাদের সঙ্গে। আপনাদের সুন্দর কর্মের সঙ্গে সবসময়। রাষ্ট্রে আপনাদের মতো মানুষের জয় হোক, জয় হোক আপনারও।

জোবায়ের মিলন : সহকারী বার্তা প্রযোজক
বার্তা বিভাগ, এনটিভি

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:২৫
  • ১২:২৮
  • ৫:০২
  • ৭:০৭
  • ৮:৩০
  • ৫:৪৬