1. iamparves@gmail.com : admin :
  2. janathatv19@gmail.com : Shohag Khan : Shohag Khan
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০২:৩০ পূর্বাহ্ন

প্রকৃতির নিস্তব্ধতার সাক্ষী শীত

প্রদীপ সাহা
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২০

বাংলার ষড়ঋতুর মাঝে শীতকাল হচ্ছে প্রকৃতির নিস্তব্ধতার এক নীরব সাক্ষী। সবচেয়ে সুন্দর ও আরামদায়ক ঋতু। শীতের সকাল যে রূপ ও সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে আবির্ভূত হয় তা সত্যিই উপভোগ্য। মনে হয় দিগন্ত জুড়ে সাদা শাড়ি পরে কে যেন প্রকৃতিকে কুয়াশার আড়ালে ঢেকে রেখেছে। সকালে ঘন কুয়াশায় পথ-ঘাট ঢেকে যায়, পাতায় পাতায় এবং সবুজ ঘাসে শিশির পড়ে। বাড়ির উঠানে কিংবা একটু দূরে একত্রে জড়ো হয়ে শীতের প্রকোপ থেকে রেহাই পেতে আগুন পোহানোর চিত্র হরহামেশাই চোখে পড়ে। খোলা জায়গায় কিংবা বাড়ির উঠানে একটু রোদের জন্য প্রত্যাশায় থাকে সব বয়সীরা। গ্রামবাংলায় এসব দৃশ্য দেখে দু’চোখ জুড়িয়ে যায়। অবশ্য শহর এলাকায় এ সৌন্দর্য গ্রামের মতো এত নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করা যায় না। গ্রামের দিগন্ত বিস্তৃত প্রকৃতির মাঝখানে শীতের সকাল যে সৌন্দর্য মহিমায় সেজে ওঠে, শহরের ইট-পাথরঘেরা কৃত্রিম পরিবেশে তার আভাস নেই। নিত্যদিনের কর্মচঞ্চলতা নিয়ে জেগে ওঠে শহর। কুয়াশা মাখানো কালো পিচের রাস্তায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলে গাড়ি। রিকশাও চলে ধীরে ধীরে কুয়াশা কাটিয়ে। রাস্তার পাশে ফুটপাতের চায়ের দোকানগুলোতে জমে ওঠে ভিড়।

শহরে শীত দুপুরে আড্ডার দৃশ্য খুব একটা চোখে পড়ে না। কিন্তু গ্রামের নিস্তরঙ্গ পরিবেশে অনেকটা একঘেয়ে নারীদের জীবনে শীতের দুপুরটা বেশ মজার। যত দ্রুত পারা যায় হাতের কাজ সেরে নেয় গাঁয়ের মেয়ে-বউরা। দুপুররোদে বসে পান চিবুতে চিবুতে চলে আড্ডা। কেউ কোটেন পিঠার চাল, কেউ বা নতুন চালের মুড়ি ভাজেন, কেউ আবার উঠানে শুকাতে দেওয়া ধানের লোভে বাড়ির আশপাশে ঘুরতে থাকা কাক তাড়াতে ব্যস্ত থাকেন। বেলা যতই ছোট হোক না কেন, কাজের পরিধি আর কমে না। তবু রোদের উষ্ণতায় যতটা সম্ভব নিজেকে ভরিয়ে নিতে চান তারা। লেপ-কাঁথার মুড়ি থেকে কনকনে শীতে ঘুম থেকে ওঠা কষ্টের হলেও কর্মময় জীবন থেমে থাকে না। শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে সামান্য শীতবস্ত্র গায়ে জড়িয়ে গ্রামের কৃষকরা খুব সকালে লাঙ্গল-জোয়াল কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। ব্যস্ত হয়ে পড়ে খেত-খামারের কাজে। শহরের মানুষও কুয়াশাঘেরা সকাল থেকেই কাজকর্মে বেরিয়ে পড়ে। তাদের গায়ে থাকে বৈচিত্র্যময় সব শীতের পোশাক। ধনী শ্রেণির কাছে শীত বিলাসের সময় হলেও গরিবের কাছে মৃত্যুর সমান। ধনীরা বিচিত্র মূল্যবান সব গরম পোশাকে শীত নিবারণ করে, লেপ-তোশকের বিছানায় শুয়ে জীবনের উত্তাপ গ্রহণ করে। কিন্তু হাড়কাঁপানো শীতেও গরিবরা রাত কাটায় খড়ের ভাঙা ঘরে কিংবা শহরের ফুটপাতে। তবে এটা ঠিক যে, শীতে গ্রীষ্ম বা বর্ষা ঋতুর মতো প্রতিকূল পরিবেশ না থাকায় কর্মতৎপরতা বেড়ে যায়।

শীতে বয়ে চলে শুষ্ক বাতাস। শুষ্ক বাতাসে মুখ ও ত্বকে দেখা দেয় এক অস্বস্তিকর সমস্যা। যাদের ত্বক শুষ্ক, শীত এলে তাদের ত্বকে একটা টানটান অস্বস্তি, খড়ি ওঠার প্রবণতা ইত্যাদি দেখা যায়। হাত ও পায়ের পাতা অতিরিক্ত শুষ্ক হওয়ার কারণে ফাটতে শুরু করে। শীতের বাতাসে ঠা-াভাব ও আর্দ্রতার কারণে ত্বকের মতো চুলও রুক্ষ এবং খসখসে হয়ে ওঠে। শীতে চুলে খুশকি পড়তে বেশি দেখা যায়। যাদের ত্বক তৈলাক্ত, তাদের ব্রণের মতো দানায় মুখ ভরে যায়। শীতে ঠোঁট শুষ্কতা ও ফাটার প্রবণতাও দেখা যায়। ত্বকের মাঝে এ সময় কালো কালো ছোপ দেখা যায়, ত্বক বেশি শুকিয়ে যায়। কাজেই শীত এলে সৌন্দর্য রক্ষায় ও ত্বক পরিচর্যার ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

শীত মানে নতুন সবজির ছড়াছড়ি। এ সময় বাজার ভরে যায় মজাদার সব নতুন সবজিতে। ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর, শিম, মটরশুটি, লাউ, টমেটো, মুলা, ধনেপাতা, পালংশাক, আরও কত কী! প্রথম অবস্থায় শীতের এসব শাকসবজি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থাকলেও অনেকেই সময়ের সবজি সময়ে খাওয়াকে প্রাধান্য দেন। তবে সবজিতে আর এখন শীতের পুরনো গন্ধ খুঁজে পাওয়া যায় না। হাইব্রিড সবজি এখন বাজারের বড় একটা অংশ দখল করে আছে, তাছাড়া এসব সবজির উৎপাদনও বেশি। কিন্তু স্বাদের দিক থেকে কোথায় যেন বড্ড অমিল! গ্রীষ্মের মতো বাহারি ধরনের শীতের ফল তেমন একটা নেই। ফলের মধ্যে কেবল বরই এবং সিলেটের কিছু কমলা ওঠে বাজারে। বিভিন্ন ধরনের মাছও এ সময় বেশি পাওয়া যায়।
পল্লীর নবান্নের উৎসবের আনন্দ শীতকালকে করে তোলে মধুময়। শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সবার মনে এক ভিন্ন আমেজের সৃষ্টি হয়। গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েস তৈরির ধুম পড়ে যায়।

গ্রামবাংলায় পিঠা-পায়েসের আসর শীতকালেই বেশি জমে। খেজুরের রস থেকে গুড়, পায়েস এবং নানারকম মিষ্টান্ন তৈরি হয়। খেজুরের রসের মোহনীয় গন্ধে তৈরি পিঠা-পায়েস মধুময় হয়ে ওঠে। শুধু গ্রামবাংলায়ই নয়, শহর এলাকায়ও শীতের পিঠা খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। হিন্দু সমাজে যেমন নতুন ধানের নতুন চালে জমে ওঠে পৌষ-পার্বণ ও দেবতার নৈবেদ্য, মুসলমান সমাজেও তেমনি পিঠা-পায়েসের আনন্দ ফুটে ওঠে। শীতকালের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় পিঠা হচ্ছে ভাপা পিঠা। এছাড়া আছে কুলি পিঠা, চিতই পিঠা, দুধ চিতই, দুধ কুলি, পাটিসাপটা, ফুলঝুড়ি, ধুপিপিঠা, মালপোয়া, কন্যাভোগ, জামাইভোগ, তিলকুলি ইত্যাদি। শীত এলে শহর এলাকার বিভিন্ন ফুটপাতে, জনবহুল এলাকায়, বিভিন্ন টার্মিনালে ভাপা পিঠা বিক্রির ধুম পড়ে যায়। পাশাপাশি চিতই পিঠা, কুলি পিঠা, পাটিসাপটা ইত্যাদিও মাঝে মাঝে বিক্রি হতে দেখা যায়। যদিও খোলামেলা স্থানে পিঠা তৈরি ও বিক্রি সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর, তারপরও এ ব্যবসা বিশেষ করে ভাপা পিঠা বিক্রি বেশ জমজমাট হয়ে ওঠে। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথিক গরম গরম ভাপা পিঠার মোহনীয় গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে কিনে নিয়ে যান পরিবারের জন্য, আদরের সন্তানদের জন্য।

শীতের সকাল কিংবা বিকালে ধোঁয়া ওঠা বিচিত্র সব পিঠার অপূর্ব স্বাদ এখনো আমাদের আক্রান্ত করে নস্টালজিয়ায় ফিরিয়ে নিয়ে যায় দূর অতীতে ফেলে আসা গ্রামীণ জীবনে। নাগরিক জীবনের ব্যস্ততায় গ্রামের সেসব বাহারি পিঠা বানানোর সুযোগ নেই। অবশ্য শহরে অনেক দোকানে ইদানীং বিভিন্ন ধরনের শীতের পিঠা কিনতে পাওয়া যায়। একসময় সোনার বাংলায় যেমন শত শত নামের ধান ছিল, তেমনি সেসব ধানের পিঠারও অন্ত ছিল না। কত কী বিচিত্র নামের পিঠা! পিঠা-পায়েসকে নিয়ে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে এখনো অসংখ্য গান ও ছড়া প্রচলিত আছে। আমাদের হাজারো সমস্যা সত্ত্বেও গ্রামবাংলায় এসব পিঠা-পার্বণের আনন্দ-উদ্দীপনা এখনো মুছে যায়নি।

বেড়ানোর ধুমও বেশি পড়ে শীতে। শীত মানে হচ্ছে বাক্স-প্যাটরা বেঁধে বেরিয়ে পড়া। সবার অবশ্য তেমন সৌভাগ্য হয় না। ভ্রমণ মানুষের মনের জানালা খুলে দেয়। একসময় শীতকালে নিজের চেনা পরিবেশকে পেছনে ফেলে গ্রামে কিংবা মফস্বলে ছুটে যেতেন মানুষ। কয়েকটা দিন আপনজনদের সঙ্গে থাকা।

ছেলেমেয়েদের বার্ষিক পরীক্ষার তখন বাঁধা সময় ছিল। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের পর তারা দাদাবাড়ি-নানাবাড়ি যাবে, পিঠা-পায়েস খাবে- এসব নির্ধারিত ছিল। এখন সেই সময়টুকু করে উঠতে পারেন না অনেকে। শীতের সঙ্গে ভ্রমণের যে একটা সম্পর্ক আছে তা বোঝা যায় শীতের অতিথি পাখিদের দেখলে। প্রতি বছরই শীত মৌসুমে অসংখ্য অতিথি পাখি ডানায় ভর করে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে আমাদের দেশে আসে। আবার শীত চলে যাওয়ার পর গরম আসার মুহূর্তে এরা স্বদেশে ফিরে যায়। সব মিলিয়ে শীত সত্যিই এক উপভোগ্য ঋতু এবং প্রকৃতির নিস্তব্ধতার এক নীরব সাক্ষী।

প্রদীপ সাহা : কবি ও লেখক
psaha09@yahoo.com

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:৩২
  • ১২:২৯
  • ৫:০১
  • ৭:০৩
  • ৮:২৩
  • ৫:৫১