1. iamparves@gmail.com : admin :
  2. najmulhasan7741@gmail.com : Najmul Hasan : Najmul Hasan
  3. janathatv19@gmail.com : Shohag Khan : Shohag Khan
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১১:২৮ অপরাহ্ন

ফেরারি মরণ

মিনা শারমিন
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০২০

নিজেকে সুবিশাল প্রান্তরে জুড়ে দিয়ে সুউচ্চ দেহ মেলে পাহাড়ের বিচরণ। হঠাৎ করেই পাহাড় দেখতে পেল, তার সুউচ্চ দেহঘেঁষা রুক্ষ বুকে রেখা টেনে দেখা দিচ্ছে হালকা চির। অজানা শঙ্কায় কেঁপে উঠল পাহাড়!

তার এমন সুবিশাল দেহকে কে ভাঙতে এলো! কার এমন সাহস? কিন্তু না। চিরটা ধীরে ধীরে পাহাড়ের বুকের ভাঁজ খুলে সেখানে মায়াবী ছোঁয়া বুলিয়ে খুব যত্নে বাইরে বেরিয়ে এলো। কোমলতায় মুড়ে দিল সে পাহাড়কে।

রুক্ষ কড়কড়া পাহাড় খুঁজে পেল প্রাণের ছোঁয়া। প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতে ধীরে ধীরে পাহাড় আর ঝর্ণার মধ্যে হৃদয় দেয়া-নেয়াটাও বেশ জমল। পাহাড়ের রুক্ষ আবরণ, ঝর্ণার কোমল পরশে পরিণত হলো নৈসর্গিক সৌন্দর্যে। দিন যায় আর সম্পর্কের তুমুল জোয়ারে ভাসতে থাকে দুজন।

ঝর্ণা ঝিরিঝিরি ধারায় ভিজিয়ে চলে পাহাড়ের চোয়াল। পাহাড়ও তার পণ্ডিতবেশী বিশাল কঠোরতাকে কোমলতার আর্দ্রতায় সমর্পণ করে নির্দ্বিধায়। ঝর্ণার নৈসর্গে বন্ধ্যা পাহাড়ও ফুল ফোঁটাতে শুরু করে দিবা-রাত্রিতে রোজ হাজার বার।

এদিকে পাহাড়, ঝর্ণাকে দিনে-রাতে বারবার কসম দিতে থাকে।

—এ বুক ছেড়ে যাবে না তো কোথাও? যদি কখনও আমার এ বুক থেকে সরো, আমি পুড়ে যাব ওই আগ্নেয়গিরির লাভায়! পুড়ে পুড়ে নিঃশেষ হব, হব কয়লা, শিলা-পাললিকে ক্ষয়ে ক্ষয়ে হব জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড, হব ওই ছাইমাখা ধোঁয়া, জ্বলব কেবল জ্বলব, গুঁড়িয়ে দেব নিজেকে, ধসে পড়ব-পড়ব চাপা ওই মানবের পায়ের নিচে!

ঝর্ণাও জাপটে ধরে রাখে তার পাহাড়কে। আর বলতে থাকে— আমি তোমার বুকের রেখা ধরেই যুগ-যুগ বয়ে চলব। তোমার বুকের ওই মৃত্তিকা খুঁড়েই বসতি গড়ব আমি।

তোমার বুকের জমিনে আমি এভাবেই বইব ছন্দময় আনন্দধারায়। হব তোমারই স্রোতস্বিনী, তোমার বুকের নির্ঝরণী আর যদি তুমি চাও তবে এক নিমিষেই হয়ে যাব তোমার ভালোবাসামাখা কলঙ্কিনী।

তবে তোমার অবহেলা আর অবজ্ঞার দেয়াল যদি কখনও আমার সামনে ঘেঁষে দাঁড়ায়, কেবল তখনই নিভৃতে সরে যাব! ঝর্ণা ভালোবাসাতে বেঁচে থাকে অবহেলায় নয়!

এভাবেই চলতে থাকে পাহাড় আর ঝর্ণার সুখময় দিনলিপি। প্রতি সকালে পাহাড়টা প্রায়ই বল উঠত– ‘কত্ত ভালোবাসা রে’।

একদিন তো পাহাড়টার খায়েশই হলো বিয়ে করবে ঝর্ণাকে। এত রীতিনীতির কি আছে। সৃষ্টিকর্তাকে সাক্ষী রেখে কবুল বললেই তো হয়।

ঝর্ণাটা যে পাহাড়ে আসক্ত, খানিক বাদেই রাজি হয়ে সেও বলতে লাগল– ‘বেশ তাই হোক।’

পাহাড় যা বলে তা-ই বড় আরাধ্য মনে হয় ঝর্ণার। এক বিকালে পাহাড়ের রীতি মেনেই বিয়ে হলো তাদের।

পাহাড়ের বউ বউ ডাকে ভোর-সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা-রাত ঘোরে কাটতে লাগল ঝর্ণার। কিন্তু বাহ্যিক পূর্ণতার যে পতন আছে; এটি তো আর ঘরের পূর্ণতা না, আবেগের পূর্ণতা।

নিয়তির কাছে পরাজিত ঝর্ণার হঠাৎ কিছু দিনের জন্য যাওয়ার সময় হলো। কয়েক মাস পর আবার আসবে বলে পাহাড়কে সে সাময়িক বিদায় জানালো। কষ্টে মুড়ে গেল স্মৃতিময় ক্ষণ।

ঝর্ণা নেই। পাহাড়টা কিছুটা বিমর্ষ। হঠাৎ তার চোখে পড়ল মেঘের লুকোচুরি। মেঘের অন্তঃজালে নিজেকে জড়াতে শুরু করল পাহাড়টা। ভালো লাগতে শুরু করল মেঘকে, মেঘের ধারা বৃষ্টিকে। বৃষ্টির মধ্যে ঝর্ণাকে খুঁজে পেতে লাগল পাহাড়।

এর কিছু দিন পরই তুষার এলো। ঘিরে ধরল সাদা শুভ্রতা জড়িয়ে পাহাড়ের বুক। তুষারের সৌন্দর্যে পাহাড় বিমোহিত হয়ে পড়ল। বেশ ভাব হয়ে গেল পাহাড় আর তুষারের।

প্রেমের মৌসুমের ফাগুনে আত্মহারা পাহাড়! ধীরে ধীরে পাহাড় আর তুষারের প্রেম নিবেদনের ক্ষণও ফুরাল কিন্তু তুষার সরে গিয়ে পাহাড়কে দিয়ে গেল সবুজঘেরা অরণ্যের হাতছানি।

পাহাড় ধীরে ধীরে সবুজে হারাল। সংসার নামক আসল বিয়েতে জীবন সাজাল। মায়াময় জীবনের লতাপাতার খোঁজ পেল।

—এ তো শুধু ভালোবাসা নয়, এ যে বেঁচে থাকার অন্য নাম মায়া। ভালোবাসা ছাড়া যায়; কিন্তু আমায় ঘিরে রাখা এই লতাপাতার ভালোবাসা ঘেরা মায়া কী করে ছাড়ব আমি!

ততদিনে, পাহাড় চিরদিনের মতো ভুলতে বসেছে তার খায়েশি ক্ষণের সস্তা কবুল বলা বউ ঝর্ণাকে।

নির্দিষ্ট সময় পর সেই ঝর্ণা ফিরল। তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগল তার পাহাড়কে। কিন্তু ঝর্ণা তার গতিপথ হারিয়েছে। হঠাৎ একটু দূরে সে দেখল তার সেই ভালোবাসার পাহাড়কে।

ঝর্ণা হাত বাড়াল, ডাকতে লাগল তার এক জীবনের একমাত্র আশ্রয়, তার সবটুকু ভালোবাসা ছোঁয়ানো স্বামী পাহাড়কে! কিন্তু ঝর্ণার সেই চেনা ধ্বনি পাহাড়ের কানে আর পৌঁছাল না।

ঝর্ণা দেখল, তার ভালোবাসার স্বামী পাহাড় সবুজে মেতে দিব্যি সুখে-শান্তিতে দিন কাটাচ্ছে। তার সেই জড়ানো বুকটি এখন সবুজ এবং তার বংশধর লতাপাতার চির ভরসার স্থান।

ঝর্ণা তার ছন্দ হারাল। হারাল তার আনন্দ। বুক ফাটা কান্নায় ঝরে পড়ল সে জলপ্রপাতের ঘূর্ণিতে। সেই থেকে ঝর্ণার নাম কান্না।

পাহাড়ের বুকে কান্না হয়েই ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে আছে ঝর্ণা নামের জলধারা। চিরসত্য মরণের স্বাদ জীব হয়তো একবারই পায়। জীবদ্দশায় কেউই জানে না সেই মৃত্যুস্বাদ কেমন?

তবে বেঁচে থাকারও কিন্তু মরণ আছে। চেনা স্বাদের। অনেক নিভৃতে, মনের একান্ত গহিনে! কিছুটা ঝর্ণার ধারাতে, স্রোতের নিচে দাঁড়ানোর তীব্র জ্বালাতে, কিছুক্ষণ পানিতে আটকে থাকা জমাট বরফি চাপে।

কখনও জলপ্রপাতের ঘূর্ণিতে আবার কখনও বা পাথরে আঁচড়ে পড়া নিজেরই পানির ধাক্কাতে। প্রাণ থাকে, হৃৎপিণ্ডও থাকে, যার গভীরে নিঃশব্দে বাসা বাঁধে… বেঁচে থেকেও ঝর্ণা স্বাদের প্রাণহীন এই ফেরারি মরণ।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:২৫
  • ১২:২৮
  • ৫:০২
  • ৭:০৭
  • ৮:৩০
  • ৫:৪৬