#আমি ভাল নেই
মোখলেছুর রহমান খান সোহাগ
আজ ভাল নেই আমি…
আমি হিমালয় চূড়া হতে বলছি
আমি আজ ভাল নেই।
আমি তর্জনী আঙ্গুল উঠিয়ে
উন্মাদ কন্ঠে বলছি
আমি আজ ভাল নেই।।
আজ ভরা মাঠে সকলেই আমার কথা শুনবেন, শুনতে হবে।
আর যারা না শুনবেন তারা এক্কুনি চলে যান।
এটা আমার আদেশ!
আজ আমি বে-লাগাম
যা বলবো তাই শুনবেন।
রহিমার ছোট্র মেয়েটা ট্রাকের নিচে ধূলির সাথে
মিশে থাকা চাল পলিথিনে কুড়িয়ে জমায়,আহার মিটাবে তাই।
দ্রব্য মুল্যের বে লাগাম উর্ধগতি
দেখার কেউ নেই।
টকশোতে বলে বেড়ায় পায়ে জুতো ছাড়া লোকের বড্ড অভাব,অনাহারে নাই কেউ,বাসি ভাতের জন্য দরজায় কড়া নাড়ে না আর!
অথচ;অনাহারপীড়িত শিশু,
দলে দলে দুর্ভিক্ষের মুখ,
ভিতরে কী অস্থির উন্মাদ, ভিতরে কী নগ্ন ছেঁড়া ফাড়া!
ওহ্ কি তামশা!
গণতন্ত্র, মানবাধিকার আজ হুমকির মুখে,ঘন ঘন বিক্ষুব্ধ শ্লোগান, ডাক-তার-ব্যাঙ্ক ধর্মঘট।
কি?
এই মহাসমাবেশে মুখ চাপড়ে হাসি পাচ্ছে?
এই হাসিটা আপনার জন্য কাল,
আপনি এই সমাবেশ থেকে চলে যান।
আমি আগেই বলেছি,আজ আমি বে-লাগাম
যা বলবো তাই শুনবেন।
কারণ আমি আজ ভাল নেই।
রাজনৈতিক হিংস্রতায় জনগণ আজ বলীর স্বীকার।
পদ্মা সেতু থেকে টুপ করে ছুবিয়ে আনবে,টুপ করে ফেলে দিবে।
পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে ওঠো আরেক বার।
ওহ কি নিদারুন হিংস্র মূলক বাক্য!
ব্যকরণের বালাই নেই,
তাইতো আজ আমি ভাল নেই।
পদ্মা সেতু,বঙ্গবন্ধু টানেল,বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট,মেট্রোরেল পথ, অহেতুক ফ্লাই ওভার,সবই হলো আজ।
জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলা, বেকারত্ব হ্রাসে উল্লেখ যোগ্য কোন কর্ম সংস্থানের খবর নেই আজ।
আমার ভেতরে এখন প্রবল গ্রীষ্মকাল
খরা আর খাদ্যের অভাব; ভালো করে চেয়ে দেখো।
তাইতো আজ আমি ভাল নেই।
যে দেশে শিশু জন্ম দিতেই ট্যাক্স টোকেন সংগ্রহ করতে হয় বাড়তি ফি দিয়ে জন্ম নিবন্ধন কালে।
সে দেশে আমি ভালো থাকি কি করে?
মাঠে সাত, সরকারী গোডাউনে ডবল!!
হা হা হা……!
ন্যায্য দাম পাচ্ছে না সোনার দেশের সোনার কৃষক।
কিসের আশায় ফলাবে সোনালি ফসল?
যা হোক, আপনারা হয়তো বিরক্ত বোধ করছেন আমার কথায়,অনেকেই চলে গেছেন।
ভালো হয়েছে!
আমি একাই বলবো, আপনারা শুনলে শুনবেন না শুনলে আমার কোন অভিযোগ নেই আপনাদের বিরুদ্ধে।
আজ আমার ভেতরে হাজারো বছরের অশ্রুপাত, হাহাকার!
শুধু শূণ্যতা,শূণ্যতা।
আমলা,মন্ত্রীরা সব বাড়ি করে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে।
মিডল ক্লাসের লোকেরা লজ্জায় মুখ লুকাচ্ছে,
গরীবরা জিব্বা বের করে হা করে বলছে,ভাত দে….!
আমলা,মন্ত্রীর ছেলে মেয়েরা সাইলেন বাজিয়ে যাচ্ছে নামীদামী স্কুলে,আর আঠারো প্লাস যাচ্ছে রাতে ডিজে পার্টিতে, হুইস্কি গিলে মাতলামি করতে।
কেন?
লেখাপড়ার এত্তো বিভেদ,বিভাজন আর বানেসার মা’র মেয়ে কয়েকটা বেশি টাকার আশায় ওভার টাইম করে রাত দশটায় গার্মেন্টসে খেটে বাসায় ফিরলে বলাবলি করি ‘হইছে কাম’!
ওহ, আজ আমার ভিতরে ভীষণ গোলযোগ
ভিতরে কেমন কোলাহল উদ্যত মিছিল!
যে দেশের প্রতিটি সেক্টরে স্তরে স্তরে দূর্ণীতি, ঘুষ ছাড়া বিসমিল্লাহ বলাও চলে না,চাকরিটা তো দূরের কথা,সে দেশে কেমনে ভালো থাকি?
তেলবাজদের কারণে তেলের দাম বাড়লো, জমি দালালদের কারণে ফসলি জমি ভরাট হলো।
পাত্তি নেতাদের কারণে পরিবহন খাতে দশ হাত দূরে দূরে চাদার আবির্ভাব ঘটলো!
বিষণ যন্ত্রণা!
ডাক্তারের লাগামহীন ফি বাড়লো,ডায়াগনোসিসের ক্ষেত্রে বাড়লো ডাক্তারের দালালি।
কিচ্ছু বলবেন না, শুধু শুনবেন,
বুঝলেন?
ইউপি চৌকিদার হলো মেম্বার,মেম্বার হলো চেয়ারম্যান, চেয়ারম্যান হলো এমপি!
আর বলার সময় নেই, বাকিটা বুঝে নিবেন।
এই সমাবেশে আমাকে দেওয়া সময় শেষ!
আর একটু সময় চেয়ে নিচ্ছি।
আমার ভিতরে সমস্ত কেমন তন্দ্রাচ্ছন্ন, ভগ্ন ও ব্যথিত
ঠিক যে আঁধার তাও নয় মনে হয় মধ্যাহ্নে অকালসন্ধ্যা।
আজ গলির ভিতরে বস্তির কালু নাপিতের ছেলেও মুজিব কোর্ট পরে বলে আমিও মহান নেতা।
কেউ বলে জিয়া আদর্শে উজ্জীবীত নেতা!
রাস্ত পাকাকরণের কাচামালের টাকা উদাও করছে টিকাদার থেকে দাপ্তরিক মহল।
মুচকি হাসি দিয়ে বলে, ‘চালিয়ে যাও আছিতো,নাকি’?
আমার আর কিছু বলার নেই,এখন পর্যন্ত এই সমাবেশে যারা ধৈর্যের সাথে আমার বচন শুনছিলেন তারা চলে যেতে পারেন।
তবে হ্যাঁ,শেষ কথাটা শুনে যান,
যে দেশে তেলের দাম আর ঘিয়ের দাম সমান, সে দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সঠিক বিচার কিছুই নাই।
তাই আপনারা সিদ্ধান্ত নিবেন এক্ষুনি,কি করবেন।
আমি জানি, আপনার কি ভাবছেন, তবে আপনার ভাবনায় ভুল আছে!!
৩-০৬-২২ইং
Leave a Reply