জাককানইবি প্রতিনিধিঃ

সম্প্রতিক সময়ে MDG এবং বর্তমানে SDG-তে পরিবেশের ভারসাম্য বিষয়টি গুরুত্বের সাথে স্থান পেয়েছে। সারাবিশ্বে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার সাথে বৃক্ষরোপণ বিষয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। দেশের আয়তন অনুসারে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা উচিত ; যেখানে বর্তমানে বাংলাদেশের বনভূমি রয়েছে মাত্র ১৬ শতাংশের মত।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে এবং জনগণের মধ্যে পরিবেশের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে “বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী কল্যাণ পরিষদ, শিবগঞ্জ, বগুড়া” (USWAS) শিবগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে বৃক্ষরোপণ ও বিতরণের এক মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করে। বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ কর্মসূচি শুরু হয় ২৮ জুলাই থেকে যা সমাপ্তি ঘটে আজ উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে বৃক্ষরোপণ ও বিতরণের মধ্যে দিয়ে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব উম্মে কুলসুম সম্পা, শিবগঞ্জ ও সোনাতলা উপজেলার সার্কেল এএসপি তানভীর হাসান , শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ সিরাজুল ইসলাম, ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ডাঃ এ এইচ এম শামীম, শিবগঞ্জ উপজেলার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জাফরিন রহমান,
কৃষি কর্মকর্তা জনাব আল মুজাহিদ, সহ আরোও অনেকে।

শিবগঞ্জ পৌরসভায় গাছ লাগানোর মধ্যে দিয়ে ৯ আগস্টে শিবগঞ্জ উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালিত হয়। ফলজ, বনজ, ঔষধি গাছসহ হরেক প্রজাতির গাছ লাগানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অত্র সংগঠনের সন্মানিত উপদেষ্টা মেডিকেল অফিসার, পরিকল্পনা ও গবেষণা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডা. মোঃ রাফিউল হাসান বলেন “পুণ্ড্রবর্ধনের উত্তরসূরী শিবগঞ্জ উপজেলার আপামর জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে শিবগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী কল্যাণ পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস”
অত্র সংগঠনের সন্মানিত উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জনাব মোঃ মাসুদ রানা বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই সংগঠনটি বিভিন্ন সামাজিক ও জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অত্র উপজেলার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক সময়ে সংগঠনটি সমগ্র উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নব্যাপী বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে যা সত্যি প্রশংসার দাবিদার। আমরা জানি গাছ আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। একটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় দেশের মোট আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশের রয়েছে মাত্র ১৬ ভাগ যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এছাড়াও সমগ্র বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া ও জলবায়ুর ক্রমাগত পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। এছাড়াও বায়ুমণ্ডলে গ্রীন হাউজ গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্লোবাল ওয়ার্মিং, সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা ও উচ্চতা বৃদ্ধি, জীববৈচিত্র্য বিলুপ্ত সহ বিভিন্ন ক্ষতিকারক প্রভাব দেখা দিচ্ছে। তাই এহেন পরিস্থিতিতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও পৃথিবীকে আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য করতে বৃক্ষরোপণের কোন বিকল্প নেই। একমাত্র সবুজায়নের মাধ্যমেই আমরা পৃথিবীর ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলা করতে পারি। পরিশেষে বলতে চাই এমন প্রশংসনীয় ও গঠনমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে আগামী দিনে অত্র সংগঠনটি শিবগঞ্জ উপজেলার সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের আঞ্চলিক কর্মকর্তা এবং সম্মানিত উপদেষ্টা মোঃ মুমিন মোহাম্মদ
বলেন “বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী কল্যান পরিষদ একটি নাম, একটি ব্রান্ড, এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানাবিধ সমাজের এবং সমাজের মানুষের কল্যানে কাজ করে যাচ্ছে, শিক্ষার্থী কল্যানের পাশাপাশি, সেটারই সূচি স্বরুপ এবারের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি, আমরা জানি জলবায়ু পরবর্তনের জন্য দিন দিন তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সুতরাং আমার সমাজ, দেশকে অক্সিজেন সরবররাহ করতে শিক্ষাপ্রতিষ্টান সহ সকল সরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর আঙ্গিনা এবং মাঠ আমরা সবুজ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, এর জন্য একদল বিশ্ববিদ্যালয় তরুনরা এই কাজ অব্যাহত রাখছে এবং সমাজ কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যার জন্য মাদক, মূল্যবোধের অবক্ষয় থেকে সমাজ মুক্ত হবে, তৈরি হবে নতুন নেতৃত্ব যা দেশের এবং সমাজের কল্যানে সব সময় এগিয়ে আসবে।
“এই তরুনরাই হবে, আগামীর বাংলাদেশের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর”।

অত্র সংগঠনের উপদেষ্টা মোঃ আরিফ বিল্লাহ বলেন, “গাছ আমাদের পরিবেশের জন্য কতটা অপরিহার্য এটা আমরা জানি কিন্তু উপলব্ধি করতে পারিনা। মানুষের চিন্তা শক্তি বিকাশে বই যতটা জরুরি, শারীরিক সুস্থতা, পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে গাছ লাগানো ততোটাই জরুরি। বিগত ১২ দিন শিবগঞ্জ উপজেলার প্রায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাছ লাগানোর কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে আমরা বিশাল একটা সংখ্যক মানুষকে গাছ লাগানোতে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছি। আগামীতে এরকম কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এটাই সবার প্রত্যাশা”।
সংগঠনের ডিরেক্টর অব কো অরডিনেটর এম আর মানিক বলেন, গাছ মানুষের পরম বন্ধু। গাছ বাচলে, জীব বাচবে। দেশের এই সংকটময় সময়ে শিবগঞ্জের শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণের পাশে থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টার মাধ্যমে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। সংগঠনের সামাজিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে বৃক্ষরোপণ ছিলো একটি অন্যতম কাজ, যার মাধ্যমে শিবগঞ্জের প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবুজ শ্যামল পরিবেষ্টিত মনোরম পরিবেশ হয়ে উঠবে।
আগামীতে আমাদের এই পথচলার মাধ্যমে শিবগঞ্জের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী দেশের সেবায় বিরাট ভূমিকা পালন করবে ইনশাআল্লাহ।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী কল্যাণ পরিষদের ডিরেক্টর অব লিয়াজুঁ মোঃ মশিউর রহমান বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সম্পর্কে বলেন, “আমাদের দেশটা অনেক সম্ভাবনাময়। ভালো কাজ করলে সামাজিক, অর্থনৈতিক সাপোর্টের অভাব হয়না। আসল অভাব হলো ভালো কাজের উদ্যোগ গ্রহণের।
“বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী কল্যাণ পরিষদ, শিবগঞ্জ, বগুড়া” ঠিক এই উদ্যোগটাই গ্রহন করেছে। শিবগঞ্জ উপজেলাকে শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যাপক ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করছে । আমরা বিশ্বাস করি শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে গেলে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্র অনেক বেশি শক্তিশালী হবে আমাদের উপজেলা তথা দেশ।”
কর্মসূচীতে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা মোঃ আব্দুর রাজ্জাক (প্রভাষক শাহ মখদুম কলেজ, রাজশাহী) এবং মো: জুয়েল ইসলাম জিতু (খাদ্য পরিদর্শক)।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের ডিরেক্টর অব প্লানিং ওমর ফারুক, ডিরেক্টর অব মিডিয়া এন্ড পাবলিকেশন শাকিল আহমেদ, ডিরেক্টর অব অর্গানাইজিং আনিসুর রহমান, ডিরেক্টর অব ফাইন্যান্স জাহাঙ্গীর আলম, ডিরেক্টর অব এডুকেশন মাকসুদুর রহমান রানা, সংগঠনের এডিশনাল, এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টররা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি এবং ইউনিয়ন প্রতিনিধিরা, এবং সাধারণ সদস্যরা।
উল্লেখ্য, ‘USWAS’ শিবগঞ্জ উপজেলা বসবাসরত সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত। প্রায় ৬০০ জন সদস্যের এই সংগঠনটি আলোকিত শিবগঞ্জ গড়ার লক্ষ্যে ২০১৮ সাল থেকে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম করে যাচ্ছে।